ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে হুড়োহুড়ির মধ্যে পদদলনের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ১২১ জনে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, এদের মধ্যে শতাধিক নারী ও সাতটি শিশু রয়েছে।
এ বিষয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২ জুন) বিকেলে হাথরসের ফুলরাই গ্রামে ‘সৎসঙ্গ’ নামের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন ভোলে বাবা ওরফে নারায়ণ সাকার হরি ওরফে বিশ্ব হরি, যারা আসল নাম সুরজ পাল। এ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, মানুষের ভিড়ের তুলনায় অনুষ্ঠানস্থলটি ছোট ছিল। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক নারী বলেন, “স্থানীয় এক গুরুর সম্মানে ওই প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। লোকজন বিদায় নেওয়ার সময়েই ঘটে পদপিষ্টের ঘটনা।”
কর্মকর্তারা জানান, ‘সৎসঙ্গ’ শেষ হওয়ার পর পুণ্যার্থীরা ওই স্ব-ঘোষিত গুরুর পা ছুঁতে ভিড় করে, এতে অল্প জায়গায় বহু লোকের সমাগম ঘটে।
এদিকে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের একটি অংশ দাবি করেছেন, প্রার্থনাসভা যে মাঠে হয়েছিল তার চারদিক প্যান্ডেল দিয়ে ঘেরা ছিল, আসা-যাওয়ার পথ ছিল সংকীর্ণ আর গরমের মধ্যে ভেতরে ফ্যানের ব্যবস্থাও করা হয়নি। গরমের মধ্যে প্রচুর লোকের ভিড়ে দমবন্ধ অবস্থা তৈরি হয়েছিল, এ কারণে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ বের হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেছিল। এ হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। অনেকে মাটিতে পড়ে যান আর অন্যরা তাদের পদপিষ্ট করে দিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এক আয়োজনে পদদলিত হয়ে এত মানুষ কীভাবে মারা গেলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং বলেন, “পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পেছনে বড় একটি কারণ অধিক ভিড়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেকেই ভোলে বাবার গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন। ভোলে বাবা যে পথে হাঁটেন, পূজা করার জন্য সেই পথের মাটি সংগ্রহ করেন অনেকে। এসব কারণে একের পর এক মানুষ পড়ে গিয়ে পদদলিত হন।”
এ ঘটনায় হাথরসের ‘সৎসঙ্গের আয়োজকদের’ বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, এই অনুষ্ঠানের জন্য ৮০ হাজার মানুষের জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু উপস্থিত হয়েছিল আড়াই লাখেরও বেশি পুণ্যার্থী। এ ছাড়া অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার চেষ্টায় যারা মাটিতে বসেছিল তাদের পদদলিত করে। রাস্তার অপর পাশে লোকজন দৌঁড়ে পানি ও কাঁদা ক্ষেত পার হওয়ার চেষ্টা করলে আয়োজক কমিটির লোকজন লাঠি হাতে তাদের বাঁধা দেয়, এতে ভিড় আরও বেড়ে যায় এবং নারী, শিশু ও পুরুষ পদপিষ্ট হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, “ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সামলাতে সব ধরনের চেষ্টাই করেছিলেন। ঘটনার পর তারা আহতদের আশপাশে যেসব যানবাহন পেয়েছেন তাতে করেই হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু আয়োজকরা কোনও সহযোগিতা করেনি।”
এ বিষয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়েছেন, “ঘটনা তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগ্রা পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও আলিগড়ের কমিশনার এর নেতৃত্ব দেবেন।”