পদোন্নতিতে কোটা কমানোর প্রস্তাবে সচিবালয়ে প্রশাসন ক্যাডারদের অবস্থান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম

পদোন্নতিতে কোটা কমানোর প্রস্তাবে সচিবালয়ে প্রশাসন ক্যাডারদের অবস্থান

ছবি: সংগৃহীত

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমানো হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

রবিবার, ২২ ডিসেম্বর বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

এর আগে বেলা ১১টার পরপর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হন। সচিবালয়ের বাইরে যারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মরত, তাদের অনেকেই যোগ দেন সচিবালয়ের এই কর্মসূচিতে।

বেলা ১২টার দিকে ওই কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন।

১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, “উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে।”  

বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার দেশের সব অফিসে এক ঘণ্টা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করারা ঘোষণা দেন অন্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

তারা আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে উপসচিব পদে শতভাগ পদোন্নতি মেধার ভিত্তিতে দেওয়ার এবং কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মোর্চা আইপ্যাডের ‘বৈষম্য নিরসন পরিষদের নেতা মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, “কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই এই সরকার। কোটা নিয়ে আবার আন্দোলন হোক, এটা কি কেউ চান? শতভাগ পদোন্নতি মেধার ভিত্তিতে হোক এটা আমরা চাই।”

অন্যদিকে আন্দোলনে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের একজন উপসচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এটা দীর্ঘ দিনের প্র্যাকটিস, এখানে নতুন করে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

“উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের রায় আছে। সংস্কার কমিশন রায়ের বিরুদ্ধে গেলে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আদালতে যাবে। এটা আজকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিতে এসেছি, যে এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।”

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ নিয়ে গত বুধবার এক বিবৃতিতে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্লাহ এবং মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ একটি জনমুখী, দক্ষ, নিরপেক্ষ, এবং যুগোপযোগী প্রশাসন গঠনের উদ্দেশ্যে করা হয়নি।”

তাদের মতে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আলাদা করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে সব ধরনের পদ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

“কমিশন প্রধানের বক্তব্যে সরকার উপসচিব পদে পদোন্নতির বিষয়ে যে সুপারিশ করেছে, তা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতামত এবং তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বক্তব্যের কারণে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কমিশন তার প্রতিবেদন তৈরির আগে উপসচিব পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতামত জরিপ বা সমীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল,” বলা হয় বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার শুধুমাত্র একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ এবং জনগণের কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে কমিশনের প্রক্রিয়াটি আরও বিচার-বিশ্লেষণ এবং পর্যালোচনা করে করা উচিত। দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের আগে যথাযথভাবে সমস্ত পক্ষের মতামত নেওয়া উচিত। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কমিশনকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে, তবে অ্যাসোসিয়েশন চায়, সংস্কার প্রক্রিয়াটি ‘সত্যিই জনমুখী এবং কার্যকরী’ হোক।

“সম্প্রতি সরকার ১৯৯৮ সালে একটি নীতিমালা জারি করেছিল যার মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত কোটা ভাগ কমিয়ে অন্য ক্যাডারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর ফলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজন এবং দুভেদাভাব সৃষ্টি হয়েছে, যা রাষ্ট্রের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছে। এই ধরনের পরিবর্তন রাষ্ট্রের সুশাসন এবং শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারে।”

একই সঙ্গে কমিশনের প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের সব জেলা প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। বুধবার এ সংক্রান্ত প্রতিবাদলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। ৬৪ জেলার ডিসিরা সই করে তাদের নিজ নিজ জেলার পক্ষ থেকে কার্যবিবরণী পাঠিয়েছেন।

বর্তমানে দেশে ২৬টি ক্যাডার সার্ভিস আছে। এসব সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে উপসচিব পদোন্নতির সময় ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা এবং ২৫ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালের সার্ভিস অ্যাক্টে মেধার ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতির বিধান ছিল। উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য প্রথমে ২৫ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ৭৫ শতাংশ কোটা রেখে বিধিমালা জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

Link copied!