এপ্রিল ২, ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪.৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে। প্রতি ডলার ১০৭ টাকা ধরলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৫৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির মালিক বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) বিমা কোম্পানির কাছ থেকে এ অর্থ পেয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে গত বছরের ২ মার্চ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ বিএসসি মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র বীমাকারী সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও পুন:বীমাকারী বিজলী সিন্ডিকেট হতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪.৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায় করা হয়েছে। সরকারের সার্বিক সহায়তায় সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় (বিএসসি) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের বর্তমান বাজার মূল্যের সমপরিমাণ এ অর্থ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। জাহাজের হাল বীমাকারী রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশন হতে ১৪.৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে বিএসসি।
জাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসের সহায়তায় এবং বিএসসি'র তত্বাবধানে জাহাজে অবস্থানরত ২৮ জন নাবিককে গত ৯ মার্চ ২০২২ সর্বোচ্চ দ্রুততার সাথে দেশে প্রত্যাবর্তন করানো হয়। যা বর্তমান সরকারের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। ১৪ মার্চ ২০২২ মরহুম হাদিসুর রহমানের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় তার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় জাহাজের হাল বীমাকারী রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে অবহিত করে ফরমাল নোটিশ অব এবান্ডন (পরিত্যাক্ত) প্রদান করা হয় এবং কন্সট্রাকটিভ টোটাল লস (সিটিএল) দাবি উপস্থাপন করা হয়। বীমা চুক্তির (ব্লকিং এন্ড ট্র্যাপিং) ক্লজ অনুযায়ি ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ কন্সট্রাকটিভ টোটাল লস (সিটিএল) সাইকেল সমাপ্ত হওয়ার পর বীমাকারী ও পুনঃবীমাকারী দাবীর অংক ২২.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দ্রুত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। দাবীকৃত ২২.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে বীমা প্রিমিয়াম বাদ দিয়ে বীমাকারী সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃক বিএসসিকে ১৪.৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। যা ২১ মার্চ ২০২৩ বিএসসির স্থানীয় ব্যাংকে গৃহিত হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ তুরস্কের ইরেগলী বন্দর হতে কার্গো ডিসচার্জ করে গতবছরের ২১ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে। জাহাজটি গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কার্গো লোডিং এর নিমিত্ত অলভিয়া বন্দরের ইনার এ্যাংকরেজে প্রবেশ করে। জাহাজ অলভিয়া বন্দরের ইনার এ্যাংকরেজে অবস্থানকালীন ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বন্দরের প্রবেশমুখে মাইন স্থাপন করে রাখা এবং বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় জাহাজ অলভিয়া বন্দরের ইনার এ্যাংকরেজ থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি এবং পরবর্তীতে ২ মার্চ ইউক্রেনের স্থানীয় সময় আনুমানিক বিকেল ৫.১০ মিনিটে জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন এবং জাহাজের ব্রীজরুমসহ সকল নেভিগেশন টুলস সম্পূর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি গতবছরের ১৬ জুন রাজধানীতে বিএসসি’র আঞ্চলিক কার্যালয় বিএসসি টাওয়ারে এমভি সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মরহুম মো. হাদিসুর রহমানের পরিবার এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও নাবিকদের ৭ মাসের বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপুরণের প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার চেক প্রদান করেন। থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মরহুম মো. হাদিসুর রহমানের পরিবারকে ৫,০৫,০০০ (পাঁচ লক্ষ পাঁচ হাজার) মার্কিন ডলার এর সমপরিমাণ ক্ষতিপুরণের চেক প্রদান করা হয়। এটি বাংলাদেশ তথা বহির্বিশ্বের মেরিটাইম সেক্টরে নজীরবিহীন। এছাড়া থার্ড ইঞ্জিনিয়ার নিহত মরহুম মো. হাদিসুর রহমানের ভাইকে বিএসসিতে চাকুরী দেয়া হয়েছে।