কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলাকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলাটি বাল্যবিবাহমুক্ত উপাধি পেল। রাজারহাট হেলিপ্যাড মাঠ চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন প্রধান অতিথি হিসাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বাংলাদেশস্থ সুইডেন দূতাবাস এর অর্থায়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সহযোগী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর বাস্তবায়নে বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর র্গালস (বিবিএফজি) প্রকল্পের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। অন্যান্য অতিথিবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর বিবিএফজি প্রজেক্ট ম্যানেজার নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আরডিআরএস বাংলাদেশ এর হেড অফ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আব্দুল সামাদ সহ আরও অনেকে।
বাল্যবিবাহ বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি; উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রমকে আরও সক্রিয়, বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে রাজারহাটকে চূড়ান্তভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করাই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য।
প্রধান অতিথি কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, “আজকের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজারহাট উপজেলার একটি মাইল ফলক সূচিত হলো এবং নারী ক্ষমতায়নের এক নবযাত্রা শুরু হলো। আমাদের সবাইকে আরো বেশি কাজ করতে হবে, এই উন্নয়নকে ধরে রাখতে হবে”।
জেলা প্রশাসক বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের গর্ভন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা সূচক অর্জন করেছি। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে বাল্যবিবাহমুক্ত ইউনিয়ন হিসাবে ঘোষিত এই মর্মে সার্টিফিকেট পেয়েছি। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাল্যবিবাহকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে চাই। রাজারহাটকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলতে চাই”।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজারহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম বাল্যবিবাহ সর্ম্পকিত বর্তমান তথ্য উপস্থাপন করেন।
২২ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে রাজারহাট উপজেলাকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যদের অংশগ্রহণে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কর্ম-পরিকল্পনায় অনুযায়ী সকল ইউনিয়নকে প্রাথমিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা হয়েছে।
বিবিএফজি প্রকল্পটির মাধ্যমে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিপূর্ণ ৬০১ শিশুর পরিবারকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা বাল্য বিবাহ না দেয় এবং মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যায়। কন্যাশিশুদের মধ্যে বাইসাইকেল চালানো ও ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, জেন্ডার ইকুইটি মুভমেন্ট ইন স্কুল মডিউল বিষয়ে ৭২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ২৮০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান। চ্যাম্পিয়ন ফাদার কর্তৃক বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সর্ম্পকে সেশন পরিচালনা। নিকাহ নিবন্ধক সহ যারা বিবাহ পড়িয়ে থাকেন যেমন ঈমাম,ঘটক ও পুরোহিতদের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও বয়স যাচাই করণের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
করোনা পরবর্তী সময়ে রাজারহাট উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের অংশগ্রহণে মতিবিনময় সভার আয়োজন করা, এলাকায় বাল্যবিবাহের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বিবিএফজি প্রকল্পটি ২০১৭ সাল থেকে কুড়িগ্রাম জেলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাধায়নে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো-বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা গঠনে কুড়িগ্রাম জেলার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা যাতে, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচে কোন কন্যা শিশুর বিয়ে না হয় এবং ১৮ বছরের নিচে কন্যা শিশুর বিয়ের হার এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে। সর্বপরি কুড়িগ্রাম জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।