ধানের ব্লাস্ট রোগের পাশাপাশি এবার কৃষকের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে চিটা। তাপ প্রবাহের কারনে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া ও বৃষ্টিপাত কম হবার কারণে অনেক বোরো ক্ষেতে চলতি বছরে ধানের ভেতরে শাস শুকিয়ে গেছে। যে কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি চিটা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে দেশের উত্তারাঞ্চলে এই ধরনের সমস্যা বেশি হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে এই তথ্য জানা গিয়েছে।
বেশি ভুগছে সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা
তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে সিলেট অঞ্চলে এই ধরনের চিটা ও ব্লাস্টের আক্রমণের হার বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৮৪২ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা গেছে। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলেই ৩৫৩ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। তবে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হবার কারণে ধানগুলোতে শাস কম হয়েছে।
সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সমস্যা হয়েছিল চারা লাগানোর ক্ষেত্রে। এদিকে ব্রি-২৮ জাতের ধান অগ্রিম লাগানো হয় বিধায় এটিতে বেশি সমস্যা হয়েছে। ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও অনেক চাষীদের ধানের মধ্যে শাঁস কম ছিল। ফলে কিছু জায়গায় চিটার পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি চাষ না করতে বলা হচ্ছে। তাছাড়া মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না পাওয়ায় জাতটির উৎপাদনে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তবে ব্রি- ৮৮, ব্রি-৯৬, ব্রি-১০০ ও ব্রি- ৮৯, ব্রি-৯২, বিনা-২৪, বিনা-২৫ সহ উচ্চ ফলনশীল ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
ফলনে সমস্যা হবে না
সর্বশেষ মঙ্গলবারের হিসেব অনুসারে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চলতি বছরে মোট ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ২৯ লাখ ২ হাজার হেক্টরের ফসল কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৫৮.৫৫ শতাংশ কাটা হয়েছে। আর উত্তারাঞ্চলের ধান ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ পাকা হয়েছে। যার ফলে বাকি দুই দিনের মধ্যেই ধান কাটা হয়ে যাবে। এই ধরনের চিটা ও ব্লাস্ট ফলনে কোন প্রভাব ফেলবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা (সরেজমিন উইং) কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানায়, চিটা ও ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণে আমরা খুব ভালভাবে কাজ করছি। তবে প্রকৃতির ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই কোন লক্ষণ দেখা গেলে নিকটস্থ কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার নির্দেশনা রয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মূল সমস্যা ব্রি-২৮ জাতের ধান
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী ব্রি-২৮ হল বোরো মৌসুমের একটি আগাম জাতের ধান। যা চাষাবাদের অনুমোদন পায় ১৯৯৪ সালে।
ইতোমধ্যে ধানটির বয়স ২৯ বছর হয়ে যাওয়ায় এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর আগের মতো নেই। ফলে ব্লাস্টের জীবাণু এই পুরনো জাতকে দ্রুত আক্রান্ত করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুল লতিফ।
তিনি বলেন, কোন ধানের জাত পুরনো হয়ে গেলে এর আগের বৈশিষ্ট্য আর থাকে না, ক্ষয় হতে থাকে। মাটির বিভিন্ন রোগ ফসলটিকে চিনে ফেলায় সহজেই আক্রমণ করে ফেলে। ব্লাস্ট জীবাণু এতদিনে ব্রি-২৮ জাতের রোগ প্রতিরোধী জিনকে চিনে ফেলেছে। এ কারণে স্পর্শকাতর এই জাতে রোগবালাই বেশি দেখা দেয়।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, এই ধানটির জীবনকাল ১৪০ দিন এবং স্বাভাবিক ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন। আগাম ফলানো যায় বলে বন্যা-প্রবণ এলাকায় যেখানে পাকা ধান পানিতে তলিয়ে থাকে সেসব এলাকার জন্য এ জাতটি বিশেষভাবে উপযোগী।
তবে বর্তমানে কৃষকদের মাঝে এই জাতের ধান লাগানোতে নিরুৎসাহী করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।