নাবিক হাদিসুরের পরিবারের ঈদ নেই

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৩, ২০২২, ১১:১০ পিএম

নাবিক হাদিসুরের পরিবারের ঈদ নেই

মায়ের চোখে ঝরায় অশ্রুবৃষ্টি/ খুঁড়ে ফেলে মাটি/ ধ্বংসস্তুপে চাপা দেয় অনেক কিছুই...

যুদ্ধ সম্পর্কে কবি এভাবেই তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ নিজেও কখনো জয়ী হয় না। যুদ্ধে হাহাকার, কান্না আর হতাশার পাহাড় ছাড়া আর কিছুই মেলে না। ইউক্রেনের বন্দরে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারেও বিষাদের ছায়া। ঈদ সবার জন্য এলেও হাদিসুরের পরিবারে কোনো ঈদ নেই। তাদের ঘিরে ধরেছে হতাশা আর অনিশ্চয়তা। কিছুতেই থামছে না তাদের আহাজারি। ঈদুল ফিতরে হাদিসুর না থাকায় তাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না এবার। হাদিসুরের বাবা-মায়ের চোখের জল ঝরছেই।

হাদিসুরের বাড়ি বেতাগী উপজেলার কদমতলা গ্রামে। সেখানে তার বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় এক বোন ও ছোট দুই ভাইসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। প্রিয় স্বজনকে হারিয়ে তারা এবার পার করেছেন বিবর্ণ আর নিরানন্দ ঈদ।

২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হলে গোলার আঘাতে নিহত হন হাদিসুর রহমান। এর প্রায় দুই মাস পর ঈদ এলেও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি তার পরিবার। কারণ আনন্দ উৎসব সব কিছুতেই ছিল তার ছোঁয়া।

ছেলের কবরের পাশে হাদিসুরের মা রাশিদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এই দিনে আমারে আর কেউ ভিডিও কল দেয় না। বলে না মা তোমার মুখটা আর ছবি দেখতে ভালো লাগে। এ কথা কেউ শোনায় না। আমার ঈদ আর আদরের হাদিস মাটির ভেতরে শুয়ে রয়েছে। অনেক  আশাইতো ছিল, তার কিছুই পূরণ হলো না। উল্টো আমারে শোকের সাগরে ভাসায়া গেছে। হাদিসুর মারা যাওয়ার পর অনেকে খোঁজ নিলেও এখন অনেকই আমাদের পাশে নেই।’ 

হাদিসুরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তার চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এবারে ঈদ আনন্দ আমাদের জন্য বিষাদ। গত বছর ঈদে হাদিস না আসলেও আমাদের সবার জন্য কেনাকাটা করে বাড়িতে টাকা দিয়েছিল। এবার কথা ছিল সবার সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্ত তা হলো কই? 

এ সময় তিনি আরও বলেন, অনেক আশ্বাস পেয়েছিলাম। তবে এখন পর্যন্ত কোনোটারই বাস্তবায়ন নেই। আমি বড় কিছু চাই না। ছেলে দুটির চাকরি এবং মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, তিনি যেন আমাদের তার পরিবারের সদস্য করে নেন।    

ভাই ভাই করে চিৎকার করছেন গোলাম মওলা প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের ঈদ আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। এবার ঈদে বাড়িতে এসে বিয়ে করার কথা ছিল তার।’ 

ঘরের সামনের বারান্দায় কাঠের চৌকিতে বসা হাদিসুরের বোন সানজিদা বেগম বলেন, কাপড় কিনতে এবার ঈদে আমারে আর কেউ টাকা পাঠায়নি। কেনাকাটা করতে বলেনি। বড় বোন হিসেবে ভাই আর কখনো সেলামি চাইবে না।

অপর ভাই তরিকুল ইসলাম বলেন, ভাই হাদিসুরকে হারিয়ে এখন আমরা অসহায়। আমরা সবার কাছে সহযোগিতা ও আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ চাই। 

পরিবারের পাশাপাশি হাদিসুরের প্রতিবেশিরাও শোকাহত। স্কুল শিক্ষিকা শাহিদা বেগম ঢলি জানান, হাদিস ঈদে বাড়িতে আসলে সবার সঙ্গে ঈদ করত। বড়দের কাছে দোয়া চাইত, ছোটদের স্নেহ করত। এখন আর কেউ দোয়া চাইবে না।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হাদিসুর রহমান। অন্য দুই লেখাপড়া করছেন।

ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, হাদিসুর অমায়িক ও সংসারে আয়ের একমাত্র লোক ছিল। এখন তার যে দুই ভাই রয়েছে যোগ্যতানুযায়ী তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হলে তারা ভালো থাকতে পারবে।

Link copied!