এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৯:৪৮ এএম
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন দেশের টানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এফআরসিএস চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন।
পাকিস্থানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়জন বাঙ্গালী পাসপোর্ট ছিড়ে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করে ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট যোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসেন। পরে ওখান থেকে কলকাতা হয়ে আগরতলায় প্রশিক্ষণ নেন এবং বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
পরে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ড. জাফরুল্লাহ সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সহযোগিতায় আগরতলার বিশ্রামঘরের মেলাঘরে গড়ে তুলেছিলেন ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম ফিল্ড হসপিটাল " বাংলাদেশ হসপিটাল"। ডা. এম এ মবিনের সাথে যৌথভাবে তিনি এই হাসপাতাল পরিচালনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তার জন্য বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছ থেকে ১০ লাখ পাউন্ড চাঁদা যোগাড় করেছিলেন। ওই প্রচেষ্টায় ডা, জাফরুল্লাহর অবদানও কম নয়।
১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিহত হওয়ার সময় লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ওই সময় ব্রিটিশ সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন- ‘তিনি(বঙ্গবন্ধু) নিজের রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করে গেলেন।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পর তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষুধ নীতি। এরশাদের সময় তার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও অসম্ভব একটি ভাল কাজ করেছেন। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তাঁর প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২৫-এ। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান বিশাল।
প্রসঙ্গত, জাফরুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন কিডনিরোগসহ বিবিধ স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী নারীনেত্রী শিরীন হক এবং দুই সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।