ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আটক অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পরীবাগ ঘুরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন সংগঠনগুলোর শতাধিক নেতাকর্মী। এক ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়।
শাহবাগের অবস্থান থেকে সন্ধ্যায় টিএসসিতে মশাল মিছিল এবং ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় টিএসসি অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) মারা যান।
ঢাকার লালমাটিয়ার বাসিন্দা মুশতাক অনলাইনে লেখালেখিতে বেশ সক্রিয় ছিলেন। সেটি কেন্দ্র করেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়েন তিনি।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গত বছরের ৬ মে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। তার সঙ্গে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।
মুশতাকের মৃত্যুর পর রাতেই টিএসসিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে রাত একটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ থেকে শুক্রবার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল।
শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, “সরকার দেশে লুটপাট ও মাফিয়াতন্ত্র তৈরি করেছে। পুরো দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সরকার জনগণের কণ্ঠরোধ করছে। তারই বলি হয়েছেন লেখক মুশতাক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
“একই সাথে অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, “অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় লেখক মুশতাককে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। ছয় ছয়বার জামিন আবেদন করা হলেও তাকে জামিন দেওয়া হয়নি।
“তার অপরাধ ছিল তিনি এই এই মহামারীতে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তার অপরাধ ছিল তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। দীর্ঘ ১১ মাস তাকে কারাগারে নির্মমভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এটাকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড বলছি। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও তদন্ত দাবি করছি।একই সাথে অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই।”
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ক্রসফায়ার, গুম, খুনের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। বেড়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যা। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী লীগ তাদের রাজত্ব কায়েম করে রাখার জন্য ভিন্নমত দমনের জন্য যা যা করার দরকার সব করছে। এই ধরনের ত্রাসের রাজত্বের অবসান দরকার।”
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাগীব নাঈম বক্তব্য দেন।