আগস্ট ২৫, ২০২১, ০৫:১৩ এএম
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের গাড়ি থামিয়ে তাকে গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত। গুলি করার পরও দীর্ঘসময় তার জ্ঞান ছিল। পরে ওসি প্রদীপ সিনহার গলা বুট চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন বলে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী সাহিদুল ইসলাম সিফাত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিনে হতা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাহিদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে সিফাত বলেন, ‘ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাহারছড়া চেকপোস্টে সিনহার গাড়ি থামান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। তিনি (সিনহা) গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার সঙ্গে সঙ্গে লিয়াকত গুলি করেন। এতে সিনহা মাটিতে পড়ে গেলেও তিনি দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন। পরে আসামি ওসি প্রদীপ এসে প্রথমে সিনহার বুকের বাম পাশে লাথি মারেন। এরপর গলায় বুট জুতা দিয়ে চেপে ধরেন। পরে মেজর (অব:) সিনহা নিস্তেজ হয়ে যান।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ মামলায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন।
সো্মবার (২৩ আগস্ট) সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস সাক্ষ্য দেওয়ার পর আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে ওই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়ায় বাকী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার নির্ধারণ করেন।
মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও লিটন মিয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট সৈকত কান্তি দে এবং অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেরা করেন।
এরপর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সিনহার সঙ্গী সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।
আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, এই মামলায় এজাহার এবং সাক্ষীর বক্তব্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। আমরা আদালতেকে তা অবহিত করেছি।’
অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে আসামিদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। এতে বিচারের আগেই আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিনে ১২ জন আসামির পক্ষে আইনজীবীরা বাদীকে জেরা করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম গণমাধ্যমে জানান, গত ২৭ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আসামিদের উপস্থিতিতে মামলাটির চার্জ গঠন করে ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই একটানা ৩ দিন বাদীসহ ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। সরকার গত ১১ আগস্ট থেকে লকডাউন তুলে নিলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ নতুন করে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন বাদীসহ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১ থেকে ১৫ নম্বর সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় ১৫ জন আসামি আদালতে হাজির থাকবেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ১৫ জন আসামিরা সকলেই কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।
সিনহা খুনের ঘটনায় ৪টি মামলা হয়েছে। ঘটনার পর পরই পুলিশ বাদী হয়ে ৩টি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায় ও একটি রামু থানায়। অন্যিদিকে, খুনের ৫ দিন পর কক্সবাজার আদালতে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। পরে ৪টি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।