প্রায় সত্তর বছর বয়েসি এক অসুস্থ বৃদ্ধ। পড়ে আছেন পরিত্যক্ত একটি সেতুর ওপর। ৫-৬দিন ধরে। পথচারীরা তাকে রুটি-পাউরুটি দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে। অন্য কোথাও না, খোদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এমন দৃশ্য গেছে। ঘটনাটি টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। স্থানীয় এক সাংবাদিক সেই প্রবীণের ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব তথ্য-ছবি পোস্ট করলে স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর টনক নড়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের।
স্থানীয়দের অভিযোগ মতে, ওই বৃদ্ধ হয়ত অপ্রকৃতিস্থ। ৬-৭ দিন বিনা চিকিৎসায় তিনি সেখানে পড়ে থাকলেও চিকিৎসার কোনো উদ্যোগ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অজ্ঞাত ওই লেঅকটি হয়ত চিকিৎসা নেওয়ার জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভর্তি হতে না পেরে হাসপাতালে প্রবেশপথের দ্বিতীয় সেতুর ওপর পড়েছিলেন।
স্থানীয়রা এক দোকানদার জানান, কয়েকদিন ধরে ওই ব্যক্তি একটা ছেড়াফাটা চাদর গায়ে জড়িয়ে হাসপাতালের সেতুর ওপর পড়ে আছেন। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে তার জবাবও ঠিকমত দিতে পারছেন না। সারাক্ষণ তাকে মশা ও মাছি কামড়াচ্ছে।
দৃশ্যটি দেখে স্থানীয় সাংবাদিক কে এম মিঠু কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি পোস্টটি ‘আমরা গোপালপুরবাসী’ নামের ফেসবুক গ্রুপেও পোস্ট করেন। এরপরই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সাংবাদিক কে এম মিঠু দ্য রিপোর্টকে বলেন, সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাসপাতাল এলাকায় যাই। সেখানকার এক চা দোকানদার অসহায় ওই বৃদ্ধের কথা আমাকে বলেন। অনেক চেষ্টা করেছি তার নাম ও পরিচয় জানতে। মনে হচ্ছে, তিনি প্রতিবন্ধী। চিকিৎসার জন্যই হয়ত হাসপাতালে এসেছিলেন।
গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলীম আল রাজী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রথমেই আমি বলতে চাই, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে আমি পছন্দ করি। এটা আমি ফেসবুকেই প্রথম দেখেছি। এটা হাসপাতালের সামনে না। এটা একটা অব্যবহৃত রাস্তা। এটা আমাদের মেইন রোড থেকে ৫০-৬০ গজ দূরে হবে। এখানে আমাদের মেইন রোড থেকে তেমন দেখা যায় না। আমি সকালবেলাও যখন এখানে এসেছি, এটা (ওই প্রবীণ) চোখে পড়েনি। সকালে উপজেলার মিটিংয়ে গিয়ে প্রথমেই ফেসবুকে এটা দেখি। আমি যেটা মনে করি, যে ফেসবুকে এটা দিয়েছে তারই দায়িত্ব ছিল তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো। আমি বিষয়টি জানার সাথে সাথে সেখানে আমাদের লোক পাঠিয়েছি।
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পারভেজ মল্লিক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্য রিপোর্টকে বলেন, ৫-৭দিন ওই প্রবীণ পড়েছিল, এ বিষয়টি সত্য না। আমি নিজেও স্বাস্থ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। যখন খবর পেয়েছি, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি। তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।