জুন ১২, ২০২৩, ০৪:০৮ এএম
দেশে প্রথম ক্যাশলেস অনলাইন ব্যাংকের প্রচলন শুরু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া `ডিজিটাল ব্যাংক` উদ্যোগটির নীতিমালা প্রনয়নের কাজ প্রায় চুড়ান্তকরনের পথে থাকলেও এর `মুড অব ট্রানজ্যাকশন` কি হবে তা ঠিক করা হয়নি।
`মুড অব ট্রানজ্যাকশন` অর্থাৎ কিভাবে ও কোন পয়েন্টে টাকা জমা ও গ্রহন হবে, গ্রাহকের হিসেবে টাকা কি করে আসবে -এ নিয়ে রবিবার (১১ জুন) যোগাযোগ করা হলে বিস্তারিত বলতে পারেনননি বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ।
গত ২ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, "ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। অচিরেই আসছে ডিজিটাল ব্যাংক।"
নিয়মানুযায়ী এটি বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড এর অনুমোদন প্রয়োজন হবে। অনুমোদন হয়ে গেলে উদ্যোক্তাদের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করার কাজও শুরু হয়ে যাবে।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার একটি রুপরেখা, নীতিমালা ও গাইডলাইন তৈরিতে কমিটি গঠন করে দেয় প্রায় একবছর আগে। ব্যাংকিং রেগুলেশন ও পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি)র তৎকালীন পরিচালক মাকসুদা বেগম এ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তিনি পদোন্নতি পেয়ে গেলে নতুন দায়িত্ব পান মো: আলী আকবর ফরাজী। কিন্ত তিনি মুড অব ট্রানজ্যাকশন সম্পর্কে বলতে পারেন না। তবে তিনি জানান, এতে সবকিছুই হবে আ্যাপসভিত্তিক।
সাধারনভাবেই প্রশ্ন জাগে, কিভাবে আ্যপস থেকে একজন হিসাবধারী টাকা ট্রান্সফার করবেন যদি ক্যাশ জমা না থাকে? এছাড়া, কিভাবে তিনি টাকা জমা দিবেন? সেটা কি অন্য ব্যাংক বা মোবাইল ফাইনাণ্সিয়াল সার্ভিস থেকে ট্রান্সফার করে টাকা এনে ডিজিটাল ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে?
জাবাবে আলী আকবর ফরাজী জানান যিনি এসব কিছু নিয়ে বিস্তারিত কাজ করছেন তিনি হজ্ব করতে সৌদি আরব অবস্হান করছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত মূখপত্র আবুল বশর এর কোনও জবাব দেননি। পরে যোগাযোগ করার কথা বলে আর কল রিসিভ করেননি।
ডিজিটাল ব্যাংকের রুপরেখা থেকে জানা যায়, পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে ডিজিটাল ব্যাংকে। টাকা জমা, ট্রান্সফার, বিল পরিশোধ, অন্যান্য পেমেন্ট এবং ব্যাংক আ্যকাউন্ট থেকে মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এ স্হানান্তর -এর সবকিছুই করা যাবে। এখানে ক্যাশের কোনও বালাই থাকবে না।
আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও বিভিন্ন ফি বা চার্জ গ্রহণ- এর সবই হবে অ্যাপসভিত্তিক। রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন বা বাণিজ্য অর্থায়নে যুক্ত হতে পারবে না ডিজিটাল ব্যাংক। এ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থাকবে কিন্তু কোনো শাখা বা এজেন্ট অফিস থাকতে পারবে না।
নিবন্ধিত প্রধান কার্যালয়ে পরিচালন কর্মীরা থাকবে।সরাসরি বা অনলাইন দুই ভাবেই গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধানের সুযোগ থাকবে।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক এর লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন দরকার হয় ৫০০ কোটি টাকা। প্রত্যেক স্পন্সরের সর্বনিম্ন শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২.৫ কোটি টাকা। ফিনটেক কোম্পানি, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস), ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারবে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী বিগত ৫ বছরের মধ্যে কোনো সময়ে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ খেলাপি হয়েছেন বা ছিলেন, এমন কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য ডিজিটাল ব্যাংকের স্পন্সর হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। ঋণ খেলাপি অবস্থার বিরুদ্ধে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কোনো নিষ্পত্তিকৃত মামলার রায়ের অপেক্ষায় আছেন, এমন কোনো ব্যক্তিও স্পন্সর হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবসা শুরু হওয়ার ৫ বছরের মধ্যে স্পন্সর শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো ব্যাংকিং কোম্পানির পরিচালক বা উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতা প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অন্তত ৫০ শতাংশ সদস্যের প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন-কানুনের বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। আর বাকি ৫০ শতাংশ সদস্য ব্যাংকিং, ই-কমার্স, এবং ব্যাংকিং আইন ও প্রবিধান ইত্যাদি নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স ইস্যু করার তারিখ থেকে ৫ বছরের মধ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে হবে প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংক।
আমানতকারীদের স্বার্থে ডিপোজিট ইন্সুরেন্স স্কীম মেনে চলতে হবে ডিজিটাল ব্যাংক কে। এ ব্যাংকের সুবিধা হলো অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় এতে ভুয়া ও বেনামি ঋণ গ্রহীতা শনাক্ত সহজ হবে এবং প্রকৃত ঋণ গ্রহীতা দ্রুত ঋণ নিতে পারবেন।