জজের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার, সহপাঠীদের সাথে বিতণ্ডায় অভিভাবক অপদস্ত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ২২, ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম

জজের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার, সহপাঠীদের সাথে বিতণ্ডায় অভিভাবক অপদস্ত

নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষ পালা করে শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করে স্কুলটিতে। এরকমই একটি নিয়ম রয়েছে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। তবে অন্যরা করলেও অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। তার ওই না চাওয়াকে কেন্দ্র করে অন্য সহপাঠীদের সাথে তার তর্কবিতর্ক হয়। পরে সেই ছাত্রী তাঁর মাকে এনে জড়ায় সেই বিতণ্ডায়। সেটি পরে শালিসে রূপ নেয়। সেই শালিসে ওই মেয়েটির মায়ের কাছে মাফ চাইতে বাধ্য হয় অন্য দুই অভিভাবক। এ নিয়ে এখন উত্তেজনা জলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভও করেছেন।

জানা গেছে, ঝাড়ু না দিতে চাওয়া মেয়েটির মা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন। সোমবার ঝাড়ু না দেওয়ার ওই ঘটনাটি এক পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ায়। বিচারকের মেয়েটি সহপাঠীদের তিরস্কার করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। সেই পোস্টের নিচে প্রতিবাদ জানিয়ে কমেন্ট করে কয়েকজন। এর জেরে ওই বিচারক বিদ্যালয়ে গিয়ে অভিভাবকদের ডেকে অপমান করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সারা দিন এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রীরা। 

মঙ্গলবার দুই অভিভাবককে ‘অপদস্থ’ করার অভিযোগে বিকেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরে শিক্ষকদের আশ্বাসে তারা বিদ্যালয়ের ভেতর প্রবেশ করে বিক্ষোভ দেখায়। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সাথে সহপাঠীদের ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে বিচারক দুজন অভিভাবককে অপদস্থ করেন। 

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী প্রথমে ঝাড়ু দিতে পারে না বলে দায়িত্ব এড়াতে চায়। এ নিয়ে সহপাঠীদের সাথে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সে নিজেকে ‘জজের’ মেয়ে পরিচয় দেয়। 

এরপর রাতে বিচারকের মেয়ে সহপাঠীদের ‘বস্তির মেয়ে’ আখ্যা দিয়ে পোস্ট দেয়। পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’ 

ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চারজন সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে  অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই চার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে আসেন। ওই সময় বিচারক রুবাইয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের গালাগালি করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ভরার হুমকি দেন। এ সময় দুজন অভিভাবক ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চান। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বিচার বসানো হয়। এই সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেওয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান।

সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সাথে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে। যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিল। তবে সে মাত্র তিন মাস আগে স্কুলে আশায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এ জন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে এই কাজটি সম্পন্ন করে। এই সময় অন্য শিক্ষার্থীরা “জয় বাংলা” বলে তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাঁদের সাথে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন।

Link copied!