চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো সময়ের দাবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৯, ২০২১, ০৬:৫৩ পিএম

চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো সময়ের দাবি

ছাত্রসমাজের আকূল আবেদন,

‘গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে,তারা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পাবেন। এ সময়ের মধ্যে যাদেরই বয়স ৩০ বছর হবে তারাও এই সুযোগ পাবেন। তবে বিসিএস বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাকডেটের আওতামুক্ত থাকবে। কারণ, বিসিএসের সার্কুলার যথাসময়ে প্রকাশ করেছে। 

মোট কথা,২৫ মার্চ ২০২০ থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরে পর্যন্ত যাদের বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হয়েছে তারাই ব্যাকডেটের সুবিধাটা পাবেন। এক্ষেত্রে, বিসিএস ছাড়া সকল চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ২৪ মার্চ ২০২০ সালে এসে যে শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ পূর্ণ হল সে শিক্ষার্থীটির সমাজের অবস্থান কোথায় দাঁড়াবে! কিংবা করোনাকালীন যাদের বয়স ২৭/২৮/২৯ ছিল তারাও তো চাকুরীর সার্কুলার পাইনি আবার বয়সও থেমে থাকে নি। অন্যদিকে, নার্সারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ টি বছর কেড়ে নিয়েছে ঘাতক করোনা ভাইরাস। তারা, কি অন্যায় করেছে। ২১ মাস ব্যাকডেট দিয়ে তাদেরকে কেন বঞ্চিত করা হবে। কেন, ছাত্র সমাজের মধ্যে বিভাজনের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে? আজ দেশের সকল শিক্ষার্থীদের একই ক্লাসে রেখে দিয়েছেন। তাদের একাডেমিক পরীক্ষা নেন নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ বছর ধরে বন্ধ রেখেছেন। তাদেরকে বাদ দিয়ে ব্যাকডেটের চিন্তা মাথায় আসে কি করে?

বয়স বাড়ানো নিয়ে এতো নোংরা রাজনীতি আমরা দেখতে চাই না। এসব, নয়-ছয়ের ব্যাকডেট ছাত্র-সমাজ মেনে নিবে না। সময় থাকতে, আপনাদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আনেন। আপনাদের মনগড়া সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে,যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। স্থায়ীভাবে ৩২ করে, ছাত্র-সমাজের পাশে দাঁড়ান। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী,জনাব ফরহাদ হোসেন স্যার,আপনার দেওয়া প্রস্তাবনা ছাত্র-সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তীব্র নিন্দা জানায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রজ্ঞাপন জারির আগে, আমাদের সাথে বসুন,আমাদের কথা শুনুন,ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবি মেনে নিন। আমরা,ছাত্র-সমাজ বড় অসহায়। আমরা,তর্কে-বিতর্কে যেতে চাই না।

শুধু, কোভিড-১৯,মহামারির কারণে, যে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণে চাকরির বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ চাই। কারণ, ঘাতক করোনা সকল ছাত্র সমাজ তথা শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

শিক্ষা হল একটি জাতির মেরুদণ্ড। কতিপয় ছাত্র-সমাজ যৌক্তিকভাবে চাকরির বয়স বাড়ানো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কোভিড-১৯ আসায় সে দাবি, যৌক্তিকতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। করোনা মহামারীতে, ছাত্র-সমাজ নিজেদের পরিচয় দিতে পারছেনা। তাদের কাঁধে রয়েছে, বিশাল বড় দায়িত্ব। তাদের পরিবার চাতক পাখির মত চেয়ে আছে কবে তার সোনার ছেলে/মেয়েটি চাকরি নামক সোনার হরিণটির দেখা পাবে। ছেলে-মেয়েটির চাকরিই যেন, সে সকল পরিবারের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। এদিকে,দেশে রয়েছে কর্মসংস্থানের যথেষ্ট অভাব। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি চল্লিশ লাখ বেকার। ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৫৫ লাখ মানুষ চাকুরী হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। এরপর চাকরির বাজারে তুমুল প্রতিযোগিতা তো রয়েই গেছে।

বেকাররা একডেমিক শেষ করে এসে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ করতে করতে চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর কবে যে অতিক্রম করে ফেলে তার হিসাব মিলানো বড় দায়! বর্তমানে বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২ বছর। বেড়েছে  মানুষের কর্মক্ষমতা। শুধু বাড়েনি, বেঁধে দেওয়া ৩০ টি বছর।

এখন সময় এসেছে, আমূল পরিবর্তনের। সময় এসেছে বেকার যুব সমাজের পাশে দাঁড়ানো। রাষ্ট্র যদি বেকার তৈরি করতে পারে, তাহলে বেকারদের আর্তনাদ শুনতে পারবে না কেন! কেন চাকরি পাবার সুযোগ তৈরি করে দিবে না! বয়স না বাড়ানোর কোন কারণ তো দেখছি না। বয়স বাড়াতে আপত্তি কোথায়, অন্যান্য দেশের মত সরকার তো বেকার ভাতা দিচ্ছে না!

তাই আপনাদের খসড়া প্রস্তাবনা দ্রুত বাতিল করে, ছাত্র-সমাজের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে স্থায়িভাবে চাকরির বয়স ৩২ করুন। আমরা ছাত্র-সমাজ বিশ্বাস করি, মমতাময়ী মা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্থায়ীভাবে চাকরির বয়স ৩২ করবেন এবং ছাত্র-সমাজকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখতে সহযোগিতা করবেন।’

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Link copied!