ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেওয়া নতুন সামরিক প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে শনিবারও উত্তাল প্রতিবেশী দেশটি। আজ চতুর্থ দিনে গড়ানো এ আন্দোলনে একাধিক রাজ্যে ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ রাস্তা অবরোধও চলছে। বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজারের।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদী সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন দেশের তরুণদের একাংশ। গত ক’দিন ধরে রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। সেকেন্দরাবাদে পুলিশের গুলিতে এক জনের মৃত্যুও হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বহু ট্রেন।
শনিবার সকালে বিহারে ধর্মঘট ঘিরে আবারও উত্তেজনা ছড়ায়। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিরোধিতায় শনিবার (আজ) বনধ চলছে বিহার রাজ্যে। সেখানে বহু গাড়ি জ্বালানোর অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।
গতকাল শুক্রবার বিহারে অগ্নি-বিক্ষোভ ঘিরে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ট্রেনে আগুন, গাড়ি ভাঙচুর, বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনার সাক্ষী থেকেছে এই রাজ্য। এই অবস্থায় সে রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন সামরিক নিয়োগ নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার বেত্তিয়ায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী রেনু দেবীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। অবশ্য তিনি এখন পাটনায় অবস্থান করছেন।
এনডিটিভিকে রেনু দেবী বলেছেন, “এ ধরনের সহিংসতা সমাজের জন্য খুবই বিপজ্জনক। প্রতিবাদকারীদের মনে রাখা উচিত—এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর।”
তেলেঙ্গনার সেকেন্দরাবাদে বিক্ষোভে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের গুলিতে ২৪ বছর বয়সি ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। নিহতের পরিবারকে ২৫ লাখ টাকার আর্থিক সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। পাশাপাশি পরিবারের এক সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশেও অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধিতায় তোলপাড় পড়ছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ২৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য হরিয়ানাতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বল্লভগড়ে গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। জিন্দ এলাকায় রেলপথ কার্যত কব্জা করে নেন অবরোধকারীরা। রোহতকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে কমপক্ষে ১৫ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভ চলাকালীন দুই পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
অগ্নিপথ প্রকল্প কী
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে জওয়ান নিয়োগের ঘোষণা করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ।
‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের একটি প্রত্যক্ষ সুযোগ হল, হাজার হাজার যুবক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু সমস্যা, চার বছর প্রশিক্ষণের পর দুই-তৃতীয়াংশকেই অবসর নিতে হবে। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, নিয়মানুবর্তিতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থেকে একটি বিশাল সামাজিক পরিবর্তন আশা করা যেতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কেন এই বিক্ষোভ?
প্রকল্পটি ঘোষণার পরের দিন থেকে প্রতিবাদ শুরু হয় দেশের বিভিন্ন অংশে। বিহারের বক্সা এবং মুজফ্ফরপুরে জোরালো প্রতিবাদ করেন একাংশের যুবক। তাঁদের মতে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের চাকরির বড়ো ভরসা হল ভারতীয় সেনা। চাকরিতে স্থায়িত্বের কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণেরা মূলত সেনার চাকরিকে বেছে নেন। এই প্রকল্পে এই চাকরির নিশ্চয়তা কোথায়? সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
বিভিন্ন মহল থেকেই এই প্রকল্পের সমালোচনা করা হচ্ছে। চার বছর পর যাঁরা চাকরি পাবেন না, তাঁদের কী হবে? এতে কি বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে? বিশেষ করে তাঁরা যেখানে সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এতে দেশের বেকারত্বের তেমন কোনো সুরাহা হবে না। বিপরীতে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যাবে।