যে কারণে ১৯ বছর ধরে রোজা রাখেন মোহন দাস

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১৭, ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম

যে কারণে ১৯ বছর ধরে রোজা রাখেন মোহন দাস

রোজা রাখেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ৬২ বছর বয়সী মোহন দাস। এবারের রোজায়ও নিয়মিত সিয়াম সাধনা করছেন তিনি। গত ১৯ বছর রোজা রাখায় কোনো ব্যতিক্রম হয়নি তাঁর। প্রতিদিনের মতো মাগরিবের আজানের অপেক্ষা করেন, আজান দেওয়ার সাথে সাথে তিনি ইফতারের প্লেটটি হাতে তুলে নেন। কিংবা হাতে নেন শরবতের গ্লাসটি। গত ১৯ বছর ধরে তিনি পুরো রোজার মাস এভাবেই রোজা রাখেন।

রোজা রাখা প্রসঙ্গে মোহন দাস সাংবাদিকদের বলেন, আমি রোজা ছাড়া রমজান মাস কল্পনাও করতে পারি না। এর মাধ্যমে আমি স্বাস্থ্য ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে উপকৃত হই। মুসলিম সহকর্মীদের রোজা রাখতে দেখে তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমি রোজা রাখা শুরু করি।

ইসলাম ধর্ম মতে, নির্দিষ্ট বয়সী মুসলিমদের জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা আবশ্যক। বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের সাথে বিভিন্ন ধর্মের অনেকেই রোজা পালন করছেন। তেমনি একজন দুবাই প্রবাসী দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের বাসিন্দা এই মোহন দাস। প্রায় দুই দশক ধরে রমজান মাসে রোজা রাখছেন তিনি।

১৯৯৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পর থেকে মোহন দাস দুবাই মেরিন বিচ রিসোর্টে কাজ করছেন। তখন থেকেই মুসলিম সহকর্মীদের ঐতিহ্য ও অনুশীলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রমজানের কয়েক দিন রোজা রাখা শুরু করেন। ২০০৪ সাল থেকে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিন রোজা রাখছেন তিনি। রোজা রাখার মাধ্যমে শুধু সংহতি দেখানোই নয়; বরং নিজের আত্মশুদ্ধি ও আত্ম-শৃঙ্খলার জন্য এই অনুশীলন করেন বলে জানান তিনি।

গত করোনা মহামারিকালে ২০২১ ও ২০২২ সালে ভারতে ছিলেন মোহন দাস। সেখানেও রমজান মাসে রোজার সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলেছেন তিনি। রোজা রাখায় পরিবার ও বন্ধু মহলেও বেশ প্রসংশা পান মোহন। শুধু তাই নয়; বরং তাঁকে দেখে তাঁর ২৫ বছর বয়সী মেয়েও রোজা রাখায় উৎসাহী হয়েছে। অবশ্য সে পুরো মাসের বদলে কয়েক দিন রোজা রাখে এবং আমার জন্য ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বিভিন্ন খাবার তৈরি করে।

ইফতারে সাধারণত খেজুর, ফল, হালকা ভেজা খাবার থাকে মোহন দাসের। অ্যালার্মের শব্দে সাহারির জন্য জেগে ওঠেন তিনি।

মোহনের কথা, ‘আমি একজন চাপ্রেমী। ইফতারের পর এক কাপ গরম চায়ের স্বাদ অতুলনীয়। আমার কর্মস্থল দুবাই মেরিন বিচ রিসোর্টে জমকালো ইফতার বুফে রয়েছে। সেখানে অতিথিদের সাথে ইফতার করি। ইফতারের সময় খুবই সুন্দর পরিবেশ রূপ ধারণ করে। বিশেষত পার্শ্ববর্তী জুমাইরাহ মসজিদের আজানের ধ্বনি আধ্যাত্মিক পরিবেশকে করে তুলে অতুলনীয়।’

সুস্বাস্থ্য ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে রোজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানান মোহন দাস। মোহন বলেন, রোজা আমাকে বিস্ময়করভাবে সহযোগিতা করেছে। আমি অমুসলিমদের তা পালনের আমন্ত্রণ জানাবো। আমিরাতে অনেক অমুসলিম রমজান মাসে রোজা রাখেন। আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অংশ হিসেবে কিংবা মুসলিম কর্মী ও বন্ধুদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে রোজা রাখছেন তাঁরা। বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ একে অন্যের ঐতিহ্য ও উৎসব উদযাপনে অংশ নিচ্ছে যা আমিরাতের বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছে। এ কারণে এখানে সহমর্মিতাও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।

খালিজ টাইমস

Link copied!