জুন ২৩, ২০২৩, ০২:৪৩ এএম
অনেক জল্পনা ছিল, আশাবাদ ছিল হয়তো বেঁচে ফিরবেন তারা। কিন্তু হলো না। টাইটানিক জাহাজের যাত্রীদের মতোই পরিণতি হল আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া পাঁচ যাত্রীর। ওই জাহাজের পাশেই পাওয়া গেল টাইটান সাবমেরিনের ধ্বংসস্তূপ। চার দিন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশির পর পঞ্চম দিন বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারীরা ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা জানান।
সমুদ্র পর্যটনে এই সাবমেরিন পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। বৃহস্পতিবার প্রথম প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। টাইটান সাবমেরিনের নিখোঁজের খবর ছিল বিশ্বের কোটি মানুষের উৎকণ্ঠার।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে আরও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সেগুলোর মধ্যে টাইটান সাবমেরিনের বড় পাঁচটি টুকরার সন্ধান পাওয়া গেছে। সাবমেরিনটি বিস্ফোরিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কখন সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাবমেরিনের পাঁচ আরোহীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। আরোহীদের মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি উদ্ধারকারীরা।
প্রসঙ্গত, প্রায় ১১১ বছর আগে হিমশৈলে ধাক্কা লেগে ডুবে যাওয়া ‘টাইটানিক’ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলো টাইটান নামের একটি সাবমেরিনটি। গত রবিবার উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই সাবমেরিনটিতে ক্রুসহ পাঁচ যাত্রী ছিলেন। এদের একজন আবার এই সাবমেরিন পরিচালনাকারী কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টকটন রাশ। সাবমেরিনে আরও ছিলেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিংস ও অভিযাত্রিক, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তার কিশোর ছেলে সুলেমান এবং এক ফরাসি সমুদ্র বিশেষজ্ঞ পল হেনরি নারজিওলেট।
স্টকটন রাশ
ওশেনগেট এক্সপেডিশন্স নামের কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ। নিখোঁজ সাবমেরিনটি এই কোম্পানি পরিচালনা করছে। টাইটান সাবমেরিনটির পাইলট ছিলেন তিনি নিজেই।
১৯৮৪ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাকাশ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী স্টক্টন রাশ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষরকারী বেঞ্জামিন রাশ ও রিচার্ড স্টক্টনের বংশধর।
২০০৯ সালে সিয়াটলের কাছে এভারেট নামক স্থানে বেসরকারি কোম্পানি ওশেনগেট প্রতিষ্ঠা করেন।
হামিশ হার্ডিংস
ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও অভিযাত্রিক হামিশ হাডিংস। এক ডুবে সমুদ্রের সবচেয়ে গভীর অংশে দীর্ঘ সময় অবস্থান করাসহ একাধিক গিনেজ বিশ্বরেকর্ড রয়েছে তার দখলে। উড়োজাহাজে করে দ্রুততম সময়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণের রেকর্ডও হার্ডিংসের দখলে রয়েছে।
যাত্রা শুরুর আগে শনিবার তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়েছিলেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ওশেনগেট অভিযানে যোগদান করতে পেরে তিনি গর্বিত।
অ্যাকশন অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ৫৮ বছর বয়সী এই অভিযাত্রী। দুবাইভিত্তিক এই কোম্পানিটি ক্রয় ও মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করে। এর আগে তিনি জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন রকেট কোম্পানি মহাকাশ অভিযানে ছিলেন।
পল-হেনরি নারজিওলেট
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে ৩৫ বারের বেশি ডুব দিয়েছেন ফরাসি সমুদ্র বিশেষজ্ঞ পল হেনরি নারজিওলেট। তার এজেন্ট ম্যাথিউ জোহান নিখোঁজ টাইটানে নারজিওলেটের থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন।
আরএমএস টাইটানিক কোম্পানির সমুদ্রের তলদেশ গবেষণা প্রধান। এটি একটি মার্কিন কোম্পানি। টাইটানিক থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন বস্তুর প্রদর্শনী আয়োজন করেছে। ১৯৮৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি আটটি গবেষণা ও উদ্ধার প্রদর্শনী করেছে।
শাহজাদা দাউদ ও তার পুত্র সুলেমান দাউদ
সাবমেরিনে ছিলেন ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান (১৯)। শাহাজাদা দাউদ এনগ্রো করপোরেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান। পাকিস্তানের অন্যতম ধনী পরিবারের সন্তান শাহজাদা দাউদের পোশাক ও সার উৎপাদন কোম্পানি রয়েছে।