আরিয়ান খান নির্দোষ, ছিল না মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:০৬ পিএম

আরিয়ান খান নির্দোষ, ছিল না মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা

বলিউড সিনেমার সুপারস্টার শাহরুখ খানের বড় ছেলে আরিয়ান খানের কিরুদ্ধে মাদক মামলায় ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো (এনসিবি) ষড়যন্ত্রের যেসব অভিযোগ এনেছিল; সেগুলোর প্রাথমিকভাবে কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছেন মুম্বাই হাইকোর্ট। পাশাপাশি আরিয়ানের হোয়্যাটসঅ্যাপ চ্যাটেও কোনও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি বলে জামিনের আদেশে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

আরিয়ান খানের জামিনের আদেশের অনুলিপি প্রকাশের পর শনিবার(২১ নভেম্বর) এই তথ্য জানা গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, মুম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতি নীতিন সামরে তার ১৪ পৃষ্ঠার  আদেশে জানিয়েছেন, মাদক মামলায় ষড়যন্ত্রের জন্য আরিয়ানদের একই অপরাধের উদ্দেশ্য ছিল বলে এনসিবির তরফে যে দাবি করা হয়েছে, তা খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। হাইকোর্ট জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা ক্রুজে যাচ্ছিলেন শুধু সেই ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনের ২৯ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা যাবে না।

মুম্বাই হাইকোর্টের ওই বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, আরিয়ানের কাছ থেকে কোনও মাদক উদ্ধার হয়নি। আরবাজ ও মুনমুনের কাছ থেকে যে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে, তা মাদক আইন অনুযায়ী ‘কম’। আপাতত যা তদন্ত হয়েছে, তা থেকে উঠে এসেছে যে মুনমুনের সঙ্গে যাননি আরিয়ান ও আরবাজ।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, জামিনের আদেশের অনুলিপি প্রকাশের পর বলিউডের বিশিষ্ট পরিচালক সঞ্জয় গুপ্ত টুইট বার্তায় লিখেছেন,মুম্বাই হাইকোর্ট আরিয়ান খানকে নির্দোষ বলেছেন। কিন্তু আরিয়ান এবং তাঁর মা-বাবা যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?

 

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের গত ২ অক্টোবর আরব সাগরে মুম্বাই থেকে গোয়াগামী প্রমোদতরী থেকে নিষিদ্ধ মাদকসহ আটক করা হয় শাহরুখ পুত্র সহ তার ৮ সঙ্গীকে। আটকের ১৬ ঘণ্টা জেরার পর ৩ অক্টোবর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে কয়েক দফায় আরিয়ান খানের জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যায়।

দু-দফা নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) হেফাজতে থাকবার পর গত ৭ অক্টোবর আরিয়ান খানকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। তারপর থেকে আর্থার রোড জেলে কষ্টে দিন কাটে আরিয়ানের।

এনসিবি হেফাজত থেকে মুম্বাইয়ের আদালত শাহরুখপুত্র আরিয়ান খানকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। তারপরই আরিয়ানের অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী।

এরপর কয়েক দফায় জামিন আবেদন নাকচ করা হয়। তবে ১১ ও ১৪ অক্টোবর আরিয়ানের জামিনের সম্ভাবনা তৈরী হলেও এনসিবির আবেদনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। আদালতের নির্দেশে মামলার শুনানি পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০ অক্টোবর করা হয়। তবে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, বুধবার জামিন মিলবে আরিয়ানের। আশাবাদী ছিলেন আরিয়ানের আইনজীবীরাও। তবে এদিনও জামিন পাওয়া হয়নি আরিয়ানের। গত ২৮ অক্টোবর মাদক মামলায় জামিন পান আরিয়ান। মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেল থেকে ছাড় পান ৩০ অক্টোবর।

প্রমাণ মিলেছে মাদকের: এনসিবি

গত ২০ অক্টোবর শুনানিতে আরিয়ানের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উত্থাপন করে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। তিনি নাকি বলিউডের এক উঠতি মডেলের সঙ্গে মাদক নিয়ে চ্যাটিং করেছেন। সেই কথোপকথনের নথি আদালতে জমা দিয়েছে এনসিবি।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) দাবি মুম্বাইয়ে প্রমোদতরীর ওই পার্টিতে যোগ দেওয়ার আগে উঠতি বলিউড অভিনেত্রীর সাথে শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান মাদক বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। বুধবার জামিনের শুনানির আগে আদালতের হাতে সেই তথ্য তুলে দেন এনসিবি।

এনসিবি আরও জানায়, মুম্বাই থেকে গোয়াগামী প্রমোদতরীতে এনসিবির কর্মকর্তারা তল্লাশি শুরু করার কিছু আগেই আরিয়ান বলিউড অভিনেত্রীর সাথে মাদক বিষয়ে কথা বলেছেন। তার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সে তথ্য পাওয়া গেছে বলে এনসিবি’র দাবি। আরিয়ানের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত নথি আদালতে জমা দেয়া হয় বলেও জানায় এনসিবি।

প্রধান তদন্তকারী অপসারণ

আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে মাদক মামলা নিয়ে অনেক ঘটনা আলোচনায় এসেছে। মামলার প্রধান তদন্তকারীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ভারতের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) আঞ্চলিক পরিচালক(মুম্বাই প্রধান) সমীর ওয়াংখেড়ে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভিসহ ভারতের একাধিক শীর্ষ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) আরিয়ানসহ ৫টি হাইপ্রোফাইল মাদক মামলার দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে আলোচিত এই কর্মকর্তাকে।এই পদে নতুন এসেছেন এনসিবির দিল্লির বিশেষ টিম। আর এই টিমের প্রধান হিসেবে আছেন সঞ্জয় সিং।

মাদককাণ্ডে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা জেরার পর ৩ অক্টোবর বিকেলে আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তার দেখায় এনসিবি। এরপর থেকে নতুন করে আলোচনায় আসেন সমীর ওয়াংখেড়ে। এনসিবির  এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে মামলা মিমাংসা, অর্থের বিনিময়ে সাক্ষী জোগাড়, জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকরি নেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ উঠে। যার মধ্যে ঘুষ লেনদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

Link copied!