এ যুগে পাতা কুড়িয়ে জীবিকা: মধুপুরে রাবার বাগানে মৌসুমী কর্মসংস্থান ৫ হাজার নারীর

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৪:১১ এএম

এ যুগে পাতা কুড়িয়ে জীবিকা: মধুপুরে রাবার বাগানে মৌসুমী কর্মসংস্থান ৫ হাজার নারীর

মধুপুরের বনাঞ্চলে অবস্থিত রাবার বাগানগুলোতে ঝরাপাতা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন পার্শ্ববর্তী জনপদের প্রায় পাঁচ হাজার নারী। এদের বেশীরভাগ কর্মী। প্রত্যেকের আয় দৈনিক ৬শ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। তিন থেকে দশ জন পর্যন্ত বা আরও বেশী কর্মী নিয়ে পাতা কুড়ানোর কাজে নেতৃত্ব দেয় একজন করে নারী। তারা কর্মী সংগ্রহ, তাদের অগ্রিম বেতন দেয়া, ও কুড়ানো পাতা বিক্রির ব্যবস্হা করে থাকে। এদের আয় একটু বেশী। দৈনিক কমপক্ষে এক হাজার। কেউ কেউ আরও বেশী আয় করে।

চাঁদপুর রাবার বাগানে দেখা হয় পারভীন এর সাথে। বাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রামে তার বাড়ি। পারভীনের শরীর অসুস্হ। ভারী কোনও কাজ বা গৃহস্থালি কাজ করতে পারে না। স্বামী পরিত্যক্ত পারভীন দুই ছেলেমেয়ের সংসারের একমাত্র রুটি-রুজি'র যোগানদাতা। চারজন মহিলা কর্মী ও কুড়ানো পাতা বিক্রিতে সহায়তা করা দুজন পুরুষ সহকর্মী নিয়ে সে কাজে ব্যস্ত।

রাবার বাগানে ঝরা পাতা কুড়িয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে বহন করতে বিশেষ আকৃতির ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয় এসব গাড়ী। পাহাড়ি জনপদে এসব গাড়ি বহনে ব্যবহ্রত হয় ঘোড়া। এক গাড়ী পাতা বিক্রি হয় ৪শ টাকায়। ক্রেতা বাগান থেকেই গাড়ী ভরে কুড়ানো পাতা নিয়ে যায়। পাঁচ জনের একটি দল সারাদিনে ৫-৬ গাড়ী পাতা সংগ্রহ করতে পারে।

কুড়ানো ঝরাপাতার এসব ক্রেতা আবার প্রতি গাড়ী বিক্রি করে ৯শ থেকে এক হাজার টাকায়। ক্রেতা তার লাভের অংশ থেকে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে ঘোড়াসহ গাড়ীচালককে। মধ্যবর্তী এসব ক্রেতার কারো কারো নিজস্ব ঘোড়া ও গাড়ী আছে। এদের লাভ হয় বেশী।

এসব পাতা কারা কিনে/ ব্যবহারকারী কারা

মধুপুর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কলা, ভূট্রা, আনারস, লেবু, পেয়ারা ও অন্যান্য ফলজ উৎপাদন বেড়েছে। আবহাওয়া ও মাটির প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয় এবং চাষীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে প্রতি মৌসুমে এসব হর্টিকালচার সম্প্রসারন হচ্ছে।

এ বাগান গুলোতেই চারা রোপনের অব্যবহ্রত পরপরই রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, পোকামাকড় ও গবাদি পশু কর্তৃক নষ্ট হবার প্রতিরোধক হিসেবে ঝরাপাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। রোপন করা ফলজ চারাগুলো ঢেকে দেয়া পাতার আড়ালে বেড়ে টেকসই হয়ে উঠে। এতে বাগানমালিক রোপন করা চারার প্রায় শতভাগ উৎপাদন পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। এসব ফলজ বাগানমালিকগণ রাবার বাগানের এ ঝরাপাতা'র গ্রাহক।

মধুপুর জোনে মোট পাঁচটি রাবার বাগান রয়েছে। এর মধ্যে পীরগাছা রাবার বাগান সবচেয়ে বড়। আয়তন তিন হাজার দশ একর। চাঁদপুর রাবার বাগান দুই হাজার তিন'শ উননব্বই একর, ফুলাবাড়িয়া রাবার বাগান এক হাজার তিরানব্বই একর, কমলাপুর রাবার বাগান এক হাজার পয়ত্রিশ একর ও শ্রীবর্দী রাবার বাগান ৬২৫ একর বনভূমি জুড়ে অবস্হিত।

আশেপাশের জনপদের প্রায় পাঁচ হাজার মহিলা এসব রাবার বাগানে ঝরাপাতা কুড়িয়ে তা বিক্রি করাকে মৌসুমী জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

এই জোনে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের মহাব্যবস্হাপক মো: ঈসমাইল হোসেন দি রিপোর্ট ডট লাইভ কে জানান, রাবার বাগানের ঝরা পাতা কুড়ানোতে  কর্তৃপক্ষের কোনও বিধিনিষেধ নেই।

তিনি বলেন, "ঝরে পড়া পাতা কুড়িয়ে নেয়ায় বাগানও পরিস্কার থাকে আবার দরিদ্র, ছিন্নমূল এসব নারী তাদের পরিবারের অন্নও জোটাতে পারে। আয় বেশীনহলে কিছু অর্থ তারা সঞ্চয়ও করতে পারে।"

Link copied!