রাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষককে লাঞ্ছনার অভিযোগ সহকর্মীর বিরুদ্ধে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৪, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

রাবির চারুকলা অনুষদের শিক্ষককে লাঞ্ছনার অভিযোগ সহকর্মীর বিরুদ্ধে

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে তারই অনুষদের এক সহযোগী অধ্যাপক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

চারুকলা অনুষদের ডিনের (অধিকর্তা) কক্ষে গত বুধবার অনুষদের ২৯তম সাধারণ সভা চলার সময় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভুক্তভুগী শিক্ষক চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সোবহান উপাচার্যের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

আর এ ঘটনায় অভিযোগের মুখে রয়েছেন একই অনুষদের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের দায়িত্বে আছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

লিখিত অভিযোগপত্রে আবদুস সোবাহান উল্লেখ করেন, “বুধবার চারুকলা অনুষদের অধিকর্তার কক্ষে অনুষদের ২৯তম সাধারণসভা চলাকালীন অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সসহ চারুকলায় ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট প্রোগ্রাম চালুকরণ প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হলে আমি মতামত প্রদান করি। আমার কাছে মনে হয়েছে, সান্ধ্যকোর্স চালু হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের স্বকীয়তা বিনষ্ট হতে পারে।

“এ সময় আমি বলি, সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সসহ ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট প্রোগ্রামের বিষয়গুলো বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় চালু হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিষয়টি বলায় মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা শরীফ আনোয়ার আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলায় তার সঙ্গে আমার উচ্চবাচ্য হয়।”

আবদুস সোবাহান তার অভিযোগপত্রে বলেছেন, “সে সময় মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম আমার মতামতকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একে বের করে দেওয়া হোক। যা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ারের বাইরে। এ সময় আমি দু-পা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলি, তুমি আমাকে বের করে দিতে বলার কে? সে মুহূর্তে আব্দুস সালাম উত্তেজিত হয়ে আমার কোমর জাপটে ধরে উপরে তোলে এবং বলপ্রয়োগ করে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।”

অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, “সকল সহকর্মীর সামনে এই ধরনের শারীরিক লাঞ্ছনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধির চরম লঙ্ঘন এবং একজন অধ্যাপক হিসেবে আমার জন্য অত্যন্ত অপমানজনক।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, “ওনাকে (অধ্যাপক আবদুস সোবহান) চেয়ারে বসিয়েছি এটা সত্য। তবে লাঞ্ছনার উদ্দেশ্যে নয়। সভায় একটি বিষয়ে সকলের যখন একমত তখন তিনি একা ভিন্নমত পোষণ করে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি উত্তেজিত হয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের মতো কথা বলছেন, যদিও সেটা কোনো রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছিল না।

“তখন আমি ডিন মহোদয়কে অনুরোধ করি ওনাকে থামান। এই কথাটা বলা যেন আমার অন্যায় হয়ে গেছে। এর ভেতরেও আমার পেছনে ওনার অনেক ক্ষোভ আছে। তবে ওনার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক এখনও আছে।”

সার্বিক বিষয়ে চারুকলা অনুষদের অধিকর্তা এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, “সভায় একটি বিষয়ে আলোচনা চলছিল। আলোচনার একপর্যায়ে একজন শিক্ষকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অধ্যাপক সোবহান উত্তেজিত হয়ে সভার এজেন্ডা বহির্ভূত অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। তখন সহযোগী অধ্যাপক সালাম অধ্যাপক সোবহানকে আস্তে কথা বলতে বললে অধ্যাপক সোবহান উত্তেজিত হয়ে সহযোগী অধ্যাপক সালামের দিকে তেড়ে যান।

“তখন আমি, সহযোগী অধ্যাপক সালামসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক ওনাকে ওনার জায়গায় গিয়ে কথা বলতে বললে তিনি আপত্তি করেন। তখন সহযোগী অধ্যাপক সালাম পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যাপক সোবহানকে কোলে করে তার জায়গায় নিয়ে বসিয়ে দেন।”

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেন নাই।

Link copied!