ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত | কোলাজ: টিআর
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর মা–মেয়ে হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদে নানান চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে উঠে এসেছে তাঁর ভয়ংকর অপরাধমূলক অতীতও। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ডিএমপির মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, চুরির উদ্দেশ্যেই আয়েশা মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজকে হত্যা করেন এবং পরে ঘটনা দেখে ফেলার কারণে তাঁর মেয়ে নাফিসাকেও হত্যা করেন। হত্যার পর বাসা থেকে চুরি করে স্কুল ড্রেস পরে পালিয়ে যান তিনি।
মোহাম্মদপুর থানার তথ্য অনুসারে, ঘটনার তিন দিন আগে আয়েশা ওই বাসায় কাজ নেন। কাজ শুরু করার সময় তাঁর নাম, ঠিকানা কিংবা যোগাযোগ নম্বর সম্পর্কে বাসার কারও কাছে কোনো তথ্য ছিল না। পুলিশ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেও তাঁকে শনাক্ত করতে পারেনি, কারণ আয়েশা প্রায়ই মুখ ঢেকে চলাফেরা করতেন। এমনকি তাঁর বাসার ঠিকানাও কারও জানা ছিল না।
তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায়, গত এক বছরে গৃহকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা চুরির মামলাগুলো পর্যালোচনা করে পুলিশ গলায় পোড়া দাগ থাকা জেনেভা ক্যাম্প এলাকার আয়েশা নামের এক গৃহকর্মীর খোঁজ পায়। পরে জানা যায়, গত জুলাই মাসে হুমায়ুন রোডের একটি বাসায় চুরির ঘটনাতেও তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল। এরপর তাঁর ব্যবহৃত একটি পুরোনো ফোন নম্বর চিহ্নিত করা হয়। ফোন নম্বরটির সূত্র ধরে রাব্বি নামের এক যুবকের পরিচয় মেলে, যার স্ত্রী আয়েশাই মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আরও জানা গেছে, গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আগে থেকেই বিভিন্ন বাসা থেকে চুরি করার অভ্যাস ছিল তাঁর।
তদন্তে আয়েশা জানায়, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন তিনি বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করেন। বিষয়টি নিয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ তাঁকে জিজ্ঞেস করলে বাকবিতণ্ডা হয় এবং পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দেন। এরপর কাজের চতুর্থ দিন আয়েশা বাসা থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে আসেন। ঘটনার দিন পুনরায় টাকার প্রসঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় মেয়ে নাফিসা মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি এবং নাফিসার শরীরে ৪টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।