জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের পতাকা আঁকাকে কেন্দ্র করে রাতভর উত্তেজনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১৬, ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের পতাকা আঁকাকে কেন্দ্র করে রাতভর উত্তেজনা

ছবি: সংগৃহীত

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) পাকিস্তানের পতাকা আঁকাকে কেন্দ্র করে রাতভর উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় একজন সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগও উঠেছে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সড়কে পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অন্য একদল শিক্ষার্থী তাদের বাধা দেন। পরে শাখা ছাত্রদলের সহায়তায় ওই সড়কে ও প্রশাসনিক ভবনের ফটকে দুটি পতাকা আঁকা হয়, যাতে দেওয়া হয় জুতার ছাপ। এছাড়া দুপুরে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সড়কে আরেকদল শিক্ষার্থী ভারত ও পাকিস্তানের আরও দুইটি পতাকা অঙ্কন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে প্রধান ফটকের সড়কে একদল শিক্ষার্থী পাকিস্তানের পতাকা আঁকতে গেলে প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পতাকা আঁকার পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, এর আগে ইসরায়েলের পতাকা আঁকা হলেও তখন অনুমতির প্রয়োজন হয়নি, এখন কেন অনুমতি লাগবে?

এ বিষয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে প্রক্টর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে আস-সুন্নাহ আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বাসে হলে যাচ্ছিলেন। তখন পতাকা অঙ্কনকারীরা বাসটিকে বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় ফটক ব্যবহার করতে বলেন। এক আবাসিক শিক্ষার্থী তখন বলেন, পাকিস্তানের পতাকা আঁকা ঠিক হচ্ছে না ভাই, তাদের সঙ্গে আমাদের এখন মিউচুয়াল হচ্ছে।

এরপর বাসে থাকা শিক্ষার্থীদের একাংশ নেমে এসে বাকবিতণ্ডায় জড়ান এবং রঙের কৌটা ঢেলে পতাকা মুছে দেন।

ঘটনার সময় কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মিনহাজুল ইসলামকে লাইভ সম্প্রচারের সময় হেনস্তা করা হয়। তিনি বলেন, ‍‍`অনুমতি না নেওয়ার অজুহাতে যদি পতাকা আঁকতে আসা শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর অফিসে ডাকা যায়, তবে আজ বিজয়ের দিনে যারা পাকিস্তানপ্রেম দেখিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে, তাদেরও এখনই বহিষ্কার করতে হবে।‍‍`

এরপর উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তার গাড়ির সামনে বসে পড়েন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে তিনি প্রশাসনিক ভবনে চলে যান।

রাত দেড়টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ঝটিকা মিছিল বের করে। তারা পাকিস্তানের পতাকা অঙ্কনকারীদের সঙ্গে নিয়ে ‘রাজাকারের বাচ্চারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘পিন্ডির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘রাজাকার আর স্বৈরাচার, মিলেমিশে একাকার’, ‘রাজাকারি আর করিস না, পিঠের চামড়া রাখবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে তারা উপাচার্য ও প্রক্টরকে প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে পাকিস্তানের আরেকটি পতাকা অঙ্কন করেন।

শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‍‍`সবার আগে বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিটি শ্রেণি, পেশা ও মতের মানুষকে ধারণ করেই রাজনীতি করতে হবে। আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতীকী ঘৃণাস্তম্ভের মাধ্যমে একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। সেখানে পাকিস্তানের দালালরা হামলা চালিয়েছে, সাংবাদিকদেরও ছাড় দেয়নি। প্রশাসনকে এর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।‍‍`

পতাকা অঙ্কনে বাধার প্রতিবাদে এবং রাজাকার ঘৃণা প্রদর্শনে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি দেওয়া হয়। দুপুর পর্যন্ত এ ধরনের কোনও কর্মসূচি দেখা যায়নি। তবে দুপুরে ক্যাম্পাসের একটি ডাস্টবিনে চারটি প্রিন্ট করা ছবি সাটিয়ে রাজাকার-আলবদর লেখা হয়েছে।

Link copied!