পাহাড়ধসের আশংকায় বান্দরবানের ৩০ হাজার মানুষ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৭, ২০২২, ০৮:০৩ পিএম

পাহাড়ধসের আশংকায় বান্দরবানের ৩০ হাজার মানুষ

বান্দরবানে ভারী বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে পাহাড়ের পাদদেশ। ফ‌লে যেকোনও মুহূর্তে পাহাড় ধ‌সে ঘটতে পা‌রে প্রাণহানির ঘটনা। এ অবস্থায় আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ৩০ হাজার পরিবার।

স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানে প্রায় প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসন তা‌দের রক্ষার্থে প্রতি বছর নানা উদ্যোগ নিলেও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে পারেনি। শহরের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া, হাফেজ ঘোনা, কালাঘাটা, বনরূপা, ক্যাচিং ঘাটাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড় কেটে তার পাদদেশে নতুন নতুন বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে।

পাহাড়ি জমির মূল্যে সমতলের তুলনায় কম হওয়ায় নিম্ন আ‌য়ের মানুষজন পাহাড় কেটে সেখানে বসতি নির্মাণ ক‌রেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান সদর ছাড়াও লামা, আজিজনগর, ফাসিয়াখালী, ফাইতং, গজালিয়া, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি ও মৃত্যুর সম্ভাবনা আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।

এ বছর পাহাড় ধসের আশংকা আগের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ।পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, বেঁচে থাকার তাগিদে ঝুঁকি সত্ত্বেও তাদের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার প্রতি বছর বর্ষা মৌসু‌মে বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং ক‌রে আশ্রয়কেন্দ্রে যে‌তে বলে। তখন পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনা কেটে গেলে আশ্বাস বাস্তবায়ন হয় না। প্রতি বছর বলা হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। 

বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, বেশি বেশি পাহাড় কাটলে পাহাড়ের ওপরের আস্তর সরে গি‌য়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় বর্ষার ভারী বর্ষণে পাহাড় ধস হয়। পাহাড় ধসের প্রধান কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, প্রাকৃতিকভাবে ভূমিকম্প এবং অতিবৃষ্টি। এসব কারণে পাহাড়ের মাটির গঠন দুর্বল হয়ে যায়।

এ ব্যাপার বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কায়েসুর রহমান বলেন, বান্দরবানে এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন পাদদেশে বসবাসকারী‌রা। তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতি‌টি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা থেকে জীবন বাচাঁতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

Link copied!