মার্চ ১৭, ২০২১, ১১:৪৮ পিএম
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার সমর্থক। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে কয়েক হাজার মানুষ বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালায়।
সেসময় তারা কমপক্ষে ৮৮টি বাড়িঘর ও সাত-আটটি পারিবারিক মন্দিরে ভাংচুর করে ও লুটতরাজ চালায়। তবে এ ঘটনায় কোন হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনার পর ওই এলাকায় র্যাব ও পুলিশ-সহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। রয়েছে ভয় আর চাপা ক্ষোভ।
এদিকে এই হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ইউএনও, ওসিসহ বিপুল সংখ্যক র্যাব-পুলিশ সদস্য এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
সেসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের ঘর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে গ্রামবাসীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং সহযোগীতার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। সেসময় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের নেতৃত্বে থাকা ১৫ জনের নামের তালিকা প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফেসবুক পোস্টের জের ধরে বুধবার সকাল ৯টার দিকে নোয়াগাঁওয়ের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক'শ বিক্ষুব্ধ লোক জড়ো হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই গ্রামে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ওই গ্রামের লোকজন আগেই বাড়িঘর ছেড়ে পাশের গ্রাম ও হাওরে আশ্রয় নেন।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সোমবার পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলায় একটি ধর্মীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও মামুনুল হক।
এই সমাবেশের পরদিন নোয়াগাঁও গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের এক যুবক মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এই স্ট্যাটাসের প্রতিবাদ জানিয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলাম মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ করে। রাতেই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। পরে ওই যুবকের গ্রামে হামলা চালায়।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এই হামলার ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হেফাজতে ইসলামের কোন নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে শতভাগ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের পরিচয় বিবেচ্য নয়। তারা আইনের কাছে অপরাধী। তাদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
ভবিষ্যতে যাতে কোন লোক এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায় এমন ব্যবস্থা করবো। যতক্ষণ পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক হচ্ছে না ততক্ষণ পর্যন্ত র্যাব ও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আপনাদের পাশে নিয়োজিত থাকবে।