গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তাকে অপসারণের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঘেরাও করা হয়েছে বঙ্গভবন। তিনি পদত্যাগ করবেন, নাকি তাকে অপসারণ করা হবে, তা নিয়ে চলছে সর্বত্র জল্পনা-কল্পনা।
এরি মধ্যে হঠাৎ করেই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এই মুহূর্তে তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসরণ চায় না। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে এ মুহূর্তে দেশে কোনো সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, তা চায় না তারা।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার ওপরে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না, প্রশ্নটি এই মুহূর্তে দেশের কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ফলে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই সরগরম রয়েছে রাজনীতির মাঠ। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি পুরণে আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমও একই দাবিতে বক্তব্য দেন। ওইদিন রাতে ঘেরাও করা হয় বঙ্গভবন। সেখানে গুলির ঘটনাও ঘটে। তবে বুধবার সকালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে বাড়ানো হয় ব্যারিকেডের সংখ্যা।
এদিনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানেও আসে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান আপনারা দেখেছেন। আমরা বলেছি বিক্ষোভকারীরা যেনো বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। গতকাল থেকে বঙ্গভবনের আশপাশে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি না—এই প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমরা বলছি, কোনো অগ্রগতি হলে আপনারা জানবেন।
এদিন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ বিষয়ে কোনো ধরনের আন্দোলন বিক্ষোভ করা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতির মো. সাহাবুদ্দিনকে বহাল রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম। বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ওইসময় বিদ্যমান সংবিধান ও রাষ্ট্রপতিকে রেখেই, সরকার গঠন করেছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের যদি মনে হয় যে, এই সেট আপে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অথবা জনগণ এই সেট আপে অসন্তুষ্ট, তাহলে এ বিষয় নিয়ে আমরা ভাববো এবং পুনর্মুল্যায়ন করছি।
নাহিদ ইসলামত বলেন, রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না, এ প্রশ্নটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ফলে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
আর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তরুণ এই উপদেষ্টা। বলেন, আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত হয়তো আসবে। তবে এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে, আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা।
সবাইকে সচেতন ও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, নানা ধরনের যে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এমন কোনো পরিস্থিতি যেনো তৈরি না হয়, যাতে তারা সুবিধা নিতে পারে। সে বিষয়ে আমাদের সবাইকেই সচেতন এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিক্ষোভ আন্দোলন থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, এ বিষয়ে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সবাই যেনো সচেতন থাকি। আর বঙ্গভবন বা অন্য কোথাও, কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করতে বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ
এদিকে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের আহমেদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান ষ্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের আরও বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফলে সবাইকেই শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জনগণের যে কোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সংহতি এবং সহনশীলতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে সরকার কি পারবে অপসারণ করতে?
’জনগণের মেসেজটি আমরা সকলেই পেয়েছি এবং এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি। আলোচনার মাধ্যমেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে যেতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, পাশাপাশি পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আপনারা দেখছেন, তারা বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্রসহ মিছিল করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যও বেড়েছে।
‘আমরা যে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখি সকলেই এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং তাদের বিরুদ্ধে যেনো আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ তৈরি করি,’ বলেন নাহিদ।