মে ৯, ২০২৪, ০৯:২৬ পিএম
বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে ও উৎপাদন ছাড়াই সেগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
লোডশেডিংয়ের তথ্য তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, “রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে তেমন ঘাটতি হয়নি। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এমনকি শিল্পাঞ্চলেও লোডশেডিং বাড়ছে। তাই শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। লোডশেডিংয়ে ভুগছে মুলত এ সংস্থার গ্রাহকেরা। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৫৫ শতাংশই এই সংস্থার । তীব্র তাপদাহের সময় গ্রামাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং ভোগ করেছে।”
আরইবির সূত্র বলছে লোডশেডিং হয়েছে রংপুর-ময়মনসিংহ-কুমিল্লা-রাজশাহী-সিলেট ছাড়াও রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো এবং বরিশালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায়। এসব এলাকায় ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করতে হয়েছে তীব্র তাপদাহের সময়।
বিরোধী দলের নেতা বলেন, শিল্পকারখানায় লোডশেডিং না করার জন্য সরকারের নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছেনা।
২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরর্বরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে দুই বছর, ২০১৪ সালে চার বছর, ২০১৮ সালে তিন বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে পাঁচ বছরের জন্য এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর ফলে ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইনটি কার্যকর থাকবে।
এই আইনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই আইন থেকে স্পষ্ট যে বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উপস্থাপন করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “এই আইনের আওতায় বিনা দরপত্রে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্রয়, দফায় দফায় অতিরিক্ত মূল্যে চুক্তি নবায়ন, অতি উচ্চমূল্যের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি, বিনা দরপত্রে গ্যাস-বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ, অবকাঠামো নির্মাণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ আইন অনুসারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংক্রান্ত কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা যাবে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের চাহিদার ১৭ হাজার মেগাওয়াট। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৭১৬২ মেগাওয়াট। প্রয়োজনের বেশী ১০ হাজার মেগাওয়াটের উপরে উৎপাদন ক্ষম বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে আছে। অর্থাৎ ১০-১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহের বিষয়টি পিডিবি কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা প্রনয়নে বিবেচনা করা যায়, এ চিন্তাই তাদের মাথায় আসেনি।”
তিনি যোগ করেন, “এই অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেসরকারি খাতে অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছিল এই ধরনের পরিস্থিতিতে সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখার জন্য।”
তিনি অভিযোগ করেন, “অনুসন্ধানে দেখা যায় এ ধরনের বেসরকারী মালীকানাধীন কেন্দ্র কখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি বা ক্ষীন সংখ্যক বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও এর পরিমান হলো তাদের সক্ষমতার ১-২ শতাংশ। অর্থাৎ কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ সময়েই উৎপাদন বিহীন অলস সময় পার করেছে।”
“বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাড়িয়েছে সরকারি হিসাবে ২৭ হাজার ১৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সাধারণত ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাপপ্রবাহের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলস বসে আছে, এই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন ছাড়াই ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে ।”