চুয়াডাঙ্গার আলোচিত মনোয়ার হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ুর আপিল শুনানি নিষ্পত্তির আগেই তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অভিযোগ উঠেছে। দণ্ড কার্যকরের চার বছর পর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আপিল শুনানির।
বুধবার (৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ১১ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে শুনানি হয়নি।
ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে করা আপিলটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হলে আইনজীবী স্বজনদের কাছ থেকে জানতে পারেন, চার বছর আগে ২০১৭ সালেই দণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়। দুই আসামির বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারি ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে। তাদের একজন মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম, অপরজন গোলাম রসুল ঝড়ু মৃত আকছেদের ছেলে। তারা নিষিদ্ধিঘোষিত চরমপন্থি দল-পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।
আপিল শুনানির আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর কখনোই সম্ভব নয়। সেটি কীভাবে হলো, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিস্ময়।নিয়মানুযায়ী, নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে অনুমতি প্রয়োজন হয় হাইকোর্টের। হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন হওয়ার পর তা কার্যকরে আরও কিছু প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলার কোনো পক্ষ যদি আপিল দায়ের করে সেক্ষেত্রে তা নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষা করতে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। হাইকোর্ট কর্তৃক কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের পর আপিল দায়ের করা হলে আপিল বিভাগ থেকে কারা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ডিসির কাছে এ বিষয়ে নির্দেশনা যায়। ফলে দণ্ড কার্যকর ওই সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন চুয়াডাঙ্গায় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মনোয়ার হোসেন খুন হলে তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেন আদালত।
পরবর্তীতে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে
মোকিম (আপিল নং- ১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নং- ১০৭/২০১৩) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করে। তখন মোকিমের পক্ষে আপিল মামলাটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির।
এদিকে দীর্ঘসময় পর আপিল মামলাটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় ওঠার পর দরিদ্র মোকিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির জানতে পারেন আপিল নিষ্পত্তির আগেই ২০১৭ সালে মোকিমের ফাঁসি কার্যকর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। অন্য আসামি ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে।
আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিচারপ্রার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছি, কনডেম প্রিজনার মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যেই কার্যকর করা হয়েছে। মূলত মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারেননি।