মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘকে যা জানালো সরকার, নাগরিক সমাজসহ বিশিষ্টজনেরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৭, ২০২২, ১০:৩২ পিএম

মানবাধিকার ইস্যুতে জাতিসংঘকে যা জানালো সরকার, নাগরিক সমাজসহ বিশিষ্টজনেরা

চারদিনের সফরে এসে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগাদান, সুশীল সমাজ, কক্সবাজার সফর, রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও তিনি মতবিনিময় করেছেন। এসময় মিশেল ব্যাচলেটকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে অবহিত করেছে সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বিশিষ্ঠজনেরা।

আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চায় জাতিসংঘ

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট টাউন হল মিটিং ও নৈশভোজে বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় করেন। আর এই অনুষ্ঠানেই নাগরিক সমাজ ও সরকারসহ বিশিষ্টজনেরা তাকে মানবাধিকার বিষয়ে অপপ্রচার সম্পর্কে মিশেল ব্যাচলেটকে অবহিত করা হয়।

পররাষ্ট্র সচিব ড. মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় মত বিনিময় পর্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য  রাখেন ঢাকায় নিযু্ক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত সমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড۔ সাদেক হালিম, নারী নেত্রী আরোমা দত্ত, রোকেয়া কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মফিদুল হক, অ্যাম্বাসেডর আব্দুল হান্নান, অ্যাম্বাসেডর শামীম আহসান, শিফা হাফিজা, প্রফেসর সাহাব আনাম খান।

বেশিরভাগ বক্তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র ফুটে উঠে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামীর বক্তৃতায়l

তিনি বলেন, “গত এক দশকে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটা মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।”

আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ তথ্য দিয়ে মিশেল ব্যাচলেটকে বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারবিরোধী কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু মানবাধিকার সংগঠন তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করছে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে জামিন দেওয়া না দেওয়া, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, সাংবাদিকদের এই আইনের বাইরে রাখা; এই আইনে প্রকৃত সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হচ্ছে কিনা- এই সকল বিষয়ের সাংবিধানিক ও আইনি ব্যাখ্যা দেন তিনি। 

আওয়ামী লীগের এই নেতা জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানকে আরও জানান,প্রচলিত বেশ কয়েকটি আইনে যৌক্তিক কারণেই বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে। অনেক আইনেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে জামিন না দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে উচ্চ আদালত জামিন দিয়ে থাকেন। সাংবাদিকসহ কোনও কমিউনিটিকে নির্দিষ্ট কোনও ফৌজদারি আইনের আওতার বাইরে রাখা সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। 

মিশেল ব্যাচলেটকে ড. সেলিম আরও জানান, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মানবাধিকার সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করছে, তাতে দেখা যায় এই সংগঠনগুলো যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করছে; সেগুলো সরকারবিরোধী কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া।

কোনও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পক্ষপাত দুষ্ট কোনও সোর্স থেকে তথ্য নেওয়া সমীচীন নয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আরও জানান,  “এই সকল সংগঠনের রিপোর্টে যে ফুটনোট ব্যবহার করা হয়, তাতে দেখা যায় তারা কেবলমাত্র সরকারবিরোধী সোর্স থেকে তথ্য নিচ্ছে। এই ধরনের পক্ষপাত দুষ্ট ও একপেশে রিপোর্ট সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।”

পরে মিশেল বাচেলেট বলেন, বিশ্বের সকল দেশের মানবাধিকার নিয়েই সমস্যা রয়েছে। আমি অনেক শক্তিশালী ও ধনী রাষ্ট্র দেখেছি, যাদের মানবাধিকার নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। এক একটি দেশের পরিস্থিতি একেক রকম। মানবাধিকার নিয়ে প্রতিটি দেশের অনেক কাজ করার আছে। 

জাতিসংঘের হাইকমিশনার সাথে নৈশভোজ আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। 

Link copied!