ভারতের উত্তর প্রদেশ এখনো থমথমে। পুলিশি হেফাজতে জনসমক্ষে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে স্থানীয় এমপি ও সাবেক মাফিয়া আতিক আহমেদেকে। ওই সময় সাথে থাকা তাঁর ভাইকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ওই ঘটনা এখনো স্থানীয়দের মুখে মুখে।
নিহত সাবেক সংসদ সদস্য ও মাফিয়া রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদের স্ত্রী শায়েস্তা পারভীন। তাঁকেই এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। উত্তর প্রদেশ পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় তাঁর নাম আছে। শায়েস্তার সন্ধান পেতে ৫০ হাজার রুপি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। আতিকের গ্যাং-এর গডমাদার হিসেবে পরিচিতি আছে শায়েস্তা পারভীনের। স্বামীর জানাজায় তিনি আত্মসমর্পণ করবেন, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তিনি আত্মসমর্পন করেননি।
গত সপ্তাহের দুই দিনের ব্যবধানে সন্তান আসাদ আহমেদ ও স্বামী আতিক আহমেদকে হারিয়েছেন ৫১ বছর বয়সী শায়েস্তা। পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আসাদ নিহত হওয়ার দুই দিন পর পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় আতিক ও তাঁর ভাই আশরাফ বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। প্রায়াগরাজে (পুরোনো এলাহাবাদ) একটি হাসপাতালের সামনে তাঁদের গুলি করা হয়। হাতকড়া পরা এবং পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে এ অবস্থায় ওই হত্যকাণ্ড দেশে-বিদেশে ঝড় তোলে।
শায়েস্তা পারভীন কে?
শায়েস্তা ১৯৯৬ সালে আতিককে বিয়ে করার আগে ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ। তাঁর বাবা পুলিশ সদস্য ছিলেন। শায়েস্তা পারভীন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে তাঁর যোগ ছিল না।
২০০৯ সাল থেকে প্রায়াগরাজে শায়েস্তার নামে একে একে চারটি মামলা হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণা ও একটি খুনের মামলা। ২০০৯ সালে কর্নেলগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার আওতায় প্রথম তিনটি মামলা হয়েছে। আর উমেশ পালকে হত্যার অভিযোগে হয়েছে হত্যা মামলা। ওই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শায়েস্তা পারভীন।
২০২১ সালে শায়েস্তা রাজনৈতিক দল এআইএমআইএমে যোগ দেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি বিএসপিতে যোগ দেন। তখন তিনি বলেছিলেন, এসপির নেতার (সাবেক) সাথে বন্ধুত্ব থাকায় আমার স্বামী (আতিক) শৃঙ্খলা শিখতে পারেনি। আমার স্বামী সব সময় বিএসপিকে পছন্দ করত। এমনকি আগে বিএসপির শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতাও করেছে সে।
অবশ্য মেয়র নির্বাচনে শায়েস্তাকে মনোনয়ন দেননি মায়াবতী।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনজীবী উমেশ পালকে হত্যার পরিকল্পনার সাথে শায়েস্তা জড়িত ছিলেন। আতিক আহমেদ জেলে থাকা অবস্থায় তাঁর গ্যাংকে সক্রিয়ভাবে পরিচালনা করেছেন শায়েস্তা।
আতিকের এক আত্মীয় মোহাম্মদ জিসান বলেছেন, একবার আতিক তাঁর ছেলে আলি ও ৫০ জন বন্দুকধারীকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন। জিসানকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন জমি শায়েস্তার নামে লিখে দেন। তাঁর কাছ থেকে পাঁচ কোটি রুপিও দাবি করা হয়েছিল।
যোগী আদিত্যনাথকে শায়েস্তা পারভীনের লেখা একটি চিঠি আতিকের মৃত্যুর পর ছড়িয়ে পড়ে। চিঠিটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লেখা হয়। সেখানে শায়েস্তা লিখেছিলেন, আতিক ও আশরাফকে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, মন্ত্রী নন্দ গোপাল গুপ্তই উমেশ পাল হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।
শায়েস্তা চিঠিতে লিখেছেন, আপনি (আদিত্যনাথ) হস্তক্ষেপ না করলে আমার স্বামী, দেবর ও ছেলেকে মেরে ফেলা হতে পারে।