ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২, ০৯:২৬ পিএম
ডেইলি সুবাহ নামে তুরস্কের একটি জাতীয় পত্রিকা কিছু গোপন খবর দিয়েছে। ইউক্রেন ইস্যুতে পত্রিকাটি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার বরাতে একটি প্রতিবেদনে লিখেছে। যাতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর থেকে ইউক্রেনের অন্যান্য যেসব এলাকায় রুশপন্থীরা রয়েছে, সেসব এলাকায় তাদের উপর চড়াও হয় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ৪ হাজার রুশপন্থীকে সরকার বিরোধী বিক্ষোভের কারণে বন্দি করা হয়।
ওই এলাকাগুলোকে গত ১ দশকে ১৪ হাজারের মত বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর দেওয়া হলেও এ সংখ্যা নাকি আরও বেশি। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার সহকারী প্রধান নাদা আল নাসিফ ওই এলাকার মানবাধিকার লংঘন বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেন জাতিসংঘের কাছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, সংঘর্ষ চলা ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি বন্দি শিবির পরিদর্শনের অনুমতি দিচ্ছে না ইউক্রেন সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, বন্দিদের সাথে সেখানে অমানুবিক আচরণ করা হচ্ছে।
ক্রিমিয়া হাতছাড়া হওয়ার পরপর রুশপন্থীদের মধ্যে যাদের বন্দি করা হয় তাদের উপর হত্যাচার শুরুতে অমানুবিক ছিলো, যা পর্যায়ক্রমে কিছুটা কমেছে। ইউক্রেনের ডোনেস্ক এবং লুহান্সক শহরেই এসব ঘটনা বেশি ঘটছে। সেখানে ইউক্রেনিয়ানদের একটা বড় অংশ যারা রুশপন্থী হিসেবে পরিচিতি তারা রাশিয়ান ভাষায় কথা বলেন। তারা নিজেদেরকে রুশ হিসেবেই দাবি করে সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই দুটি এলাকায় তারা স্বাধীনতাও ঘোষণা করেছে।
ক্রিমিয়া দখলের পর ২০১৪ সাল থেকে এই রুশপন্থীদেরও সমর্থন দিয়ে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। ওই অঞ্চলে সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশের বাইরে রুশপন্থী নিয়ন্ত্রিত অংশে সাধারণ নাগরিকদের রুশপন্থী বিদ্রোহীরা বন্দি করে নির্যাতন করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে ইউক্রেনের।
ইউক্রেন ইস্যুতে সংকট সমাধানে সম্প্রতি ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাকরন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার দুই প্রেসিডেন্টকে আলোচনার টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। ইউক্রেনে পুতিন হামলা চালাতে পারবেন না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলোচনা শুরুর আগেই দিয়েছিলেন এমন শর্ত । পুতিনও বলেছিলেন ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা বাদ দিলে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সম্প্রতি ওই রুশপন্থীদের উপর ইউক্রেনিয়ান বাহিনীর অত্যাচারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে খবর দেয় মস্কো। দুদিন আগে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পাড়ি জমানো এমন রুশপন্থীদের ছবি প্রকাশ করে মস্কো যাদেরকে রাশিয়ার ভেতরে আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকার।
এমন অবস্থার মধ্যেই হঠাৎই ইউক্রেনের ওই দুটি অঞ্চলে গিয়ে রুশ সৈন্যদের অবস্থান নিতে বললেন পুতিন। পুতিনের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। রাশিয়ার ৫টি ব্যাংক ও ৩ জন বিলিয়নারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেন। ক্রমেই অবরোধের মাত্রা বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছে ব্রিটিশরা। রাশিয়ার গ্যাসের পাইপ লাইন বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কিয়েভকে সহায়তা করতে মিত্র দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। রুশ সৈন্যদের ইউক্রেনে প্রবেশে পুতিনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি মার্কিন আধিপত্য থাকা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের ইঙ্গিত পাওয়ার পরই দেশটির সীমান্তের কাছে প্রায় ২ লাখ রুশ সৈন্য মোতায়েন করেন পুতিন।
আরও পড়তে পারেন-
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে-পুতিন