অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী বহনকারী একটি কাঠের নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৩৯৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাটি সাগর পথে যাত্রা শুরুর পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে তিউনিসিয়ার উপকূল থেকে দুটি দাতব্য জাহাজ ওইসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ভূমধ্যসাগরে বিপজ্জনকভাবে উপচে পড়া কাঠের নৌকা থেকে রোববার (১ আগস্ট) রাতে দু’টি দাতব্য উদ্ধারকারী জাহাজ ওই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করে।
খবরে বলা হয়, জার্মানি এবং ফ্রান্সের বেসরকারি সংস্থার জাহাজ সি-ওয়াচ ৩ এবং ওসান ভাইকিংয়ের উদ্ধারকারী জাহাজ উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরে তিউনিশিয়ার জলসীমার ভেতরে তেল স্থাপনা এবং অন্যান্য জাহাজের কাছ থেকে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করে।
সি-ওয়াচ ৩ রোববার রাতে ভূমধ্যসাগরে রাতের ওই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে। জার্মানির এই অলাভজনক সংস্থা মোট ১৪১ জনকে উদ্ধার করেছে। এছাড়া বাকি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের উদ্ধার করেছে ওসান ভাইকিংস। রাতের এই উদ্ধার অভিযানে জার্মানির আরেক এনজিও রেসকিউ শিপের ইয়াট ‘নাদির’ সহায়তা করেছে।
নৌকায় থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে কারও মৃত্যু অথবা কেউ আহত হয়েছেন কি-না তা এখনও পরিষ্কার নয়। নৌকাটির পাটাতন এবং বাহিরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপক ভিড় ছিল বলে রয়টার্সের খবেরে বলা হয়।
কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ?
অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা বেড়েই চলেছে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বাড়লেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দারিদ্র্যের কারণে হাজার হাজার অভিবাসী সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন। এসব অভিবাসীর বেশিরভাগেরই গন্তব্য ইতালি। ২০২১ সালে অভিবাসীদের যাওয়ার হার আবার বেড়েছে।
উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অবৈধভাবে যারা ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশ করতে চায়, তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া।
বাংলাদেশ ,ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপা্চ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা উন্নত জীবন গড়া ও ভাগ্যের চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে। তারপর দেশটির জুয়ারা উপকূল থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যু ঘটে।
নৌকাডুবির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি
সম্প্রতি চলতি বছরের জুলাই মাসে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় মৃত্যু ও উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
২৫ জুলাই: লিবিয়ায় পশ্চিম উপকূলীয় শহর খুমসের কাছে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৫৭ জন নিখোঁজ হন। তারা সবাই মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলজাজিরার খবরে বলা হয় ওই নৌকাটিতে কমপক্ষে ৭৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন।
২৪ জুলাই: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার মাহদিয়া প্রদেশে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৫৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়।
১৯-২২ জুলাই: ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৬৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে মরক্কোর নৌবাহিনীর সদস্যরা। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার খবরে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২১ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অভিবাসনপ্রত্যাশী ১৭ জন বাংলাদেশি নিহত হন। এসময় তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা ৩৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রিসেন্ট তিউনিশিয়া শাখা জানায়।
৮ জুলাই : অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় আফ্রিকার তিউনিশিয়ার উপকূলে এবটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ৪৯ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার করে।
জানুয়ারি-মে: জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা- ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) তথ্যমতে চলতি বছরের জানয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ও মাল্টা যাওয়ার পথে পাঁচ শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন।
মে, ২০১৯ : লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অন্তত ৪০ বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।