চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন পরে, গলায় আইডি কার্ড-স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরতেন তিনি। এমনকি আইসিউতেও যাতায়াত ছিল তার। পরিচয় দিতেন গাইনি চিকিৎসক হিসেবে। এমনই এক ‘প্রতারক নারী’কে আটক করেছে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা।
নীলক্ষেত থেকে অ্যাপ্রোন ও আইডি কার্ড বানিয়ে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ঢামেক থেকে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতেন ওই প্রতারণাকারী নারী। এমনকি রোগীদের মুঠোফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরির অভিযোগও এসেছে তার বিরুদ্ধে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালে নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে মুনিয়া খান রোজা (২৫) নামে ওই নারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। পরে রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
ডাক্তারদের অ্যাপ্রোন পরে তিনি হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মোবাইল ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি করতেন বলে স্বীকার করেছেন বলে জানান মামলার বাদী ওয়ার্ড মাস্টার মো. জিল্লুর রহমান।
ঢামেক হাসপাতালের আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল ব্যাপারী গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সময় নতুন ভবনের আইসিইউর দায়িত্বে ছিলেন আনসারের এপিসি জামান উদ্দিন। বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি আমাদের ওই নারীর বিষয়ে জানালে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহজনক গতিবিধি হওয়ায় আমরা ওই নারীকে আটক করি। তখন ডাক্তারদের ব্যবহারের অ্যাপ্রোন পরা ছিলেন।
কোনোভাবেই তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি ডাক্তার নন। ওই সময় আমাদের চিকিৎসকের মোবাইলও হারানো যায়। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে আমাদের জরুরি বিভাগে নিরাপদে নিয়ে আসি। এক পর্যায়ে তিনি চিকিৎসক নন বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেন।
মুনিয়া আটকের পর নিজেকে চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে জেরা করা হলে চিকিৎসাপেশার সঙ্গে জড়িত নন বলে স্বীকার করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মুনিয়া জানান, নীলক্ষেত থেকে অ্যাপ্রোন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের লোগো দিয়ে আইডিকার্ড ও মিটফোর্ড থেকে স্টেথোস্কোপ জোগাড় করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মোবাইল চুরি করতেন।
আটক মুনিয়া খান রোজা বলেন, ‘আমি ভয়ে প্রথমে বলেছিলাম আমি ঢামেক গাইনি বিভাগের চিকিৎসক। কিন্তু আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে আমি কোনও চিকিৎসক না বা চিকিৎসা পেশার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমি নীলক্ষেত থেকে ৫৫০ টাকা দিয়ে অ্যাপ্রোন কিনি এবং মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্টেথোস্কোপ ক্রয় করি। নীলক্ষেত থেকে একটি আইডি কার্ডও বানিয়েছি।’
অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আর জীবনে এ কাজ করবো না।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, অভিযুক্ত ভুয়া নারী চিকিৎসককে আনসার সদস্যরা আমাদের পুলিশ ক্যাম্পে দিয়ে যায়। পরে আমরা ওই নারীকে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
অভিযুক্ত মুনিয়া আরও জানান, তার বাড়ি চাঁদপুর সদরে। থাকেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন।