রাজধানীর বংশালে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী আড়ৎ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনে পৌঁছামাত্র একজন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে। একপর্যায়ে মহিউদ্দিন ‘দুঃখিত’ বলে ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওঁৎ পেতে থাকা আরও ৭-৮ জন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রচণ্ড কিল-ঘুঁষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তার চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং ৬০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ডাকাত সর্দারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ (লালবাগ)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, মূল সংগঠক রেজাউল করিম এবং ভিকটিমের গতিবিধি রেকিকারী দলের কামাল হোসেন।
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।
উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, যারা বড় অঙ্কের নগদ লেনদেন করতো, তাদের টার্গেট করে চক্রটি। বংশালের ঘটনায়ও আগে থেকে টার্গেট করে টাকা নিয়ে রাস্তায় বের হলেই ধাক্কা দেয় একজন। এর জের ধরে চক্রের ১০-১৫ জন ঘিরে ধরে ছিনিয়ে নেয় ব্যাগভর্তি ৬০ লাখ টাকা।
তিনি জানান, পুরান ঢাকার এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করে থাকেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকে এই হুন্ডি ব্যবসায়ীদের টাকা ডাকাতি করার জন্য। হুন্ডিতে টাকা লেনদেন করা আইনগত স্বীকৃত নয়। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সময় বিষয়টি পুলিশ বা আদালতকে জানায় না। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ডাকাত বা ছিনতাইকারীরা অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ডাকাতদের এই অপতৎপরতায় কখনও কখনও বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
মশিউর জানান, এই ডাকাতির ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। সে পুরান ঢাকায় বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থেকে কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করে এই সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেয়। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম এক সময় পুরাতন ঢাকাতেই ব্যবসা করত। খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, মিরপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ডাকাতদেরকে ঢাকায় এনে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কিল-ঘুঁষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে। তারা কম দামের বাটন ফোনে নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ করে ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম নদীতে ফেলে দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে থাকে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী যদি হুন্ডি ব্যবসায়ীও হয় তবে যেন চুপ না থেকে থানায় অভিযোগ করেন এবং ব্যবসায়ীসহ যে কেউ যদি মোটা অঙ্কের টাকা পরিবহন করতে চান তাহলে নিকটস্থ থানা পুলিশের সহায়তা নিতে সবাইকে অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা আছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।”