‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকার রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি পেয়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’—পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল মনের অজান্তেই গুনগুন করে গায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এক জীবনে তিনি অসংখ্য গান, গজল উপহার দিয়েছেন ভক্তদের। এখনও শৈশবের স্মৃতি হাতড়ালে পঙ্কজ উদাসের ক্যাসেটের দিনের কথা মনে পড়ে যায় যে কারো।
রাজকোটের কাছে অবস্থিত চারখাদি নামের একটি ছোট্ট শহরে ১৯৫১ সালের ১৭ মে পঙ্কজ উদাসের জন্ম। জমিদার পরিবারের ছেলে তিনি। বাবা কেশুভাই উদাস সরকারি চাকরিজীবী হলেও দিলরুবা বাজাতেন।
ছোট থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। ছেলেকে রাজকোটের সংগীত একাডেমিতে ভর্তি করান পঙ্কজ উদাসের বাবা। শুরুতে তবলার তালিম নিলেও পরবর্তী সময়ে গুলাম কাদির খান সাহেবের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে মুম্বাইয়ে এসে গোয়ালিয়ার ঘরানার শিল্পী নবরঙ্গ নাগপুরকরের কাছে সংগীতশিক্ষা শুরু করেন।
মূলত গজলের গায়ক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান পঙ্কজ উদাস। ১৯৮০ সালে ‘আহাট’ শিরোনামের গজল অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর সংগীত দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বলিউডের সংগীতজগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠেন।
সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ১৯৮৬ সালের মুক্তি পাওয়া ছবি ‘নাম’-এর ‘বড়ে দিনো কে বাদ/ হাম বে বসনে কো ইয়াদ...’ সংগীতপ্রেমী অগণিত শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে, এখনো এ গানের জনপ্রিয়তা আছে।
‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি পঙ্কজ উদাসকে রাতারাতি সংগীতপ্রেমী উপমহাদেশীয় শ্রোতার মনে পাকাপাকি জায়গা করে দেয়। এরপর তাঁর সংগীতজীবনে একটির পর একটি গজলের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। লাইভ কনসার্টে অংশ নিয়েছেন।
সংগীতজগতে অবদানের জন্য অজস্র সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত শিল্পী। ২০০৬ সালে ভারত সরকারের তরফে চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন গায়ক।
গান নিয়ে যেমন ব্যস্ত থাকতেন, তেমন ব্যক্তিজীবনে পরিবারকেও সময় দিতেন পঙ্কজ উদাস। শোনা যায় যে ব্যক্তিজীবনে ধূমপান ও অ্যালকোহল তাঁকে তেমন একটা ছুঁতে পারেনি। কিছুটা আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন তিনি।
তবে গানের পাশাপাশি ক্রিকেট ও গলফ খেলতে ভালোবাসতেন। এ সময় তিনি মেহেদী হাসান, বেগম আক্তার ও দ্য বিটলসের গান শুনতে পছন্দ করতেন।
সময় পেলেই সিনেমা দেখতেন পঙ্কজ উদাস। তাঁর পছন্দের চলচ্চিত্র তারকাদের মধ্যে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, ঋষি কাপুর, হৃতিক রোশন। নারী অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে মাধুরী দীক্ষিত, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার অভিনয়ের প্রশংসা করতেন।
কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী পঙ্কজ উদাস তার গানে গানে বলেন, যদি আরেকটু সময় পেতাম। কিন্তু কাউকে কোনো সময় না দিয়েই তিনি পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। তাঁর সংগীতজীবনের বিস্তার চার দশকের বেশি সময়।
আমরা মাঝে মধ্যেই নক্ষত্র পতনের কথা বলি! আজ সত্যি সত্যিই এক নক্ষত্রের পতন হলো। নক্ষত্র কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আঁধারে নিমজ্জিত হয়ে যায়! অথচ আমাদের চেতনার আকাশের যে নক্ষত্রটি আজ মহাকালের গর্ভে বিলীন হলো সেটি কিন্তু আঁধারে আবৃত হলো না, বরং আলো ছড়িয়ে, চিরকালের আলোর মশাল প্রজ্জলিত করে হারিয়ে গেলো!