‘কিং ব্যাক’ চলে যাওয়ার শূন্যতা পূরণ হয়নি আজও
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী যারা আছেন তাদের অনেকের মনেই রাজত্ব করে আছেন আজও ‘কিং ব্যাক’ মোনেম মুন্না। ফুটবল যারা ভালোবেসে এর ইতিহাসকে জানতে চেষ্টা করেছেন তারা দেখবেন নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ ফুটবলের তারকা ফুটবলার হিসেবে শোনা যেত আবাহনীর খেলোয়াড় মোনেম মুন্নার নাম। সে সময়কার ফুটবলপাগল জনগণের মুখে মুখে ছিল তাঁর নাম।
আজ থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯১ সালে মোনেম মুন্না ২০ লাখ টাকায় আবাহনীতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন যে খবর পুরো ভারত উপমহাদেশেই আলোড়ন তুলেছিল! এখনকার যুগে যদিও এরচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকে খেলোয়াড়রা চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু সে সময় এটা ছিল অকল্পনীয় ঘটনা। মোনেম মুন্নার পারিশ্রমিক নিয়ে যেমন আলোচনায় ছিলেন তেমনি তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল আকাশছোঁয়া।
১৯৮০-৮১ সালে পাইওনিয়ার লিগের পোস্ট অফিস দলের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল তাঁর। এরপর ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগর, ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে দ্বিতীয় ও প্রথম বিভাগে খেলেছেন। ১৯৮৬ সালে গোপীবাগের দল ব্রাদার্স ইউনিয়নে। ১৯৮৭ থেকে ৯৭ পর্যন্ত খেলেন আবাহনীতে।
একাধিকবার জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া এই ফুটবলার। ১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়াডেতে প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ ফুটবল দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। তাঁর অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম কোনো ট্রফি জয় করতে সক্ষম হয়। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চার জাতি ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
মোনেম মুন্না শুধু দেশে নয় প্রতিবেশি দেশ ভারতেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কলকাতার মাঠ কাঁপিয়েছেন। ভারতে বাংলাদেশ ফুটবলকে তুলে ধরেছিলেন। ঘরোয়া ফুটবলেও খেলেছেন বীরের মতো। আবাহনীর অধিনায়কের দায়িত্বও সফলতার সাথে পালন করেছিলেন। শুধু রক্ষণভাগ সামলানো নয় বরং পুরো দলকে সামলাতেন দারুণভাবে।
খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে আবাহনীর ম্যানেজার হিসেবেও যাত্রা শুরু করেছিলেন মোনেম মুন্না। কিন্তু জীবনের মায়া ছাড়িয়ে মাত্র ৩৯ বছর বয়সেই মৃত্যুকে বরণ করেন এই কিংবদন্তী ফুটবলার। ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ফুটবলে শূন্যতা এনে দিয়ে হারিয়ে যান এই তারকা।
তাঁর মৃত্যুদিনে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তী খেলোয়াড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।