ফুটবলের ‘কালো মানিক’ তিনি। এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। বিশ্ব ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তী। ফুটবলের এই রাজাকে গোটা বিশ্ব চেনে পেলে নামেই। শেষ জীবনে শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। যার কারণে প্রায়শঃ যেতে হয় হাসপাতালে। কাতার বিশ্বকাপ চলাকালে আবারও অসুস্থতা তাঁর তীব্র হল। আছেন হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা এবার খুবই ভয়াবহ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তি ফুটবলার। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রবীণ এই ফুটবলারের শরীরটা এখন ক্যামোর ধকল সইতে পারছে না।
বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ি জীবনে বহু অ্যাওয়ার্ড তিনি পেয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত পেলেকে গত মঙ্গলবার সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছিল, পেলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে আজ দুঃশ্চিন্তার কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কেমোথেরাপিতে সাড়া দিচ্ছেন না পেলে। যে সমস্যায় তিনি সেপ্টেম্বর থেকে ভুগছেন। সে কারণে তাঁকে প্যালিয়াটিভ কেয়ারে নেওয়া হয়েছে। প্যালিয়াটিভ কেয়ারে তাদেরকেই নেওয়া হয় যারা মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত এবং জীবনের একদম শেষ অবস্থায় আছেন।
ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচ খেলেছেন পেলে। ৭৭ গোল করে ব্রাজিলিয়ানদের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। অ্যাসিস্ট করেছেন ৩২ গোলে। বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল এবং ৮ গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। ব্রাজিলের ১৯৫৮,১৯৬২ ও ১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ী ছিলেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। তাঁর প্রভাব ফুটবল ছাড়িয়ে কতোটা বিস্তৃত তা নিচের একটি উক্তি থেকেই প্রতীয়মান হতে পারে।
‘আমার নাম রোনাল্ড রিগ্যান এবং আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আপনার পরিচয় দেওয়ার দরকার নাই। আপনাকে সবাই চেনে।’ কিংবদন্তী পেলেকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেন ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার ৪০ তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান।
এ প্রজন্মের সবচেয়ে তুখোড় দুই খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়রকে সঙ্গ দিচ্ছেন কিংবদন্তী পেলে। ছবি: সংগৃহীত
সত্যিই পেলেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া দরকার হয় না। তাঁর নাম, তাঁর চেহারাই ফুটবলের প্রতীক। তিনি সর্বকালের সেরা ফুটবলার, সারা বিশ্বে ফুটবলের প্রতিশব্দ, ফুটবল দিয়ে মর্তের বুকে জাদু নামিয়ে আনা ফুটবলার।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর মতে, তিনবারের ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার এই পেলেই। একজন পেশাদার ফুটবলার হয়েও ফুটবলের বাইরেও যেঠিক কতটুকু প্রভাব রেখেছিলেন পেলে তা হয়তো দুনিয়ার সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশের প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের এই পরিচয়পর্ব থেকে সামান্য স্পষ্ট হওয়া যেতে পারে। মিথ আছে যে,শুধুমাত্র পেলেকে এক নজরে দেখার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ!
তাঁর সময়ে ফুটবল মাঠে এমন উচ্ছ্বাসভরা দৃশ্য দেখা গেছে নিয়মিতই। ছবি: সংগৃহীত
জন্মের সময় বাবা নাম রেখেছিলেন এডিসন। অনেকটা আলোর আবিস্কারক টমাস আলভা এডিসনের নামের সাথে মিল রেখেই। গায়ের বর্ণ ছিল একেবারেই কালো। কিন্তু সেদিন কয়জন ভেবেছিলো, এত মিশমিশে কালো ছেলেটিই একদিন নিজেই আলো ছড়াবে? ফুটবলের এই আলো সুস্থ হয়ে আবার গ্যালারিতে ফিরে আসুক, ফুটবলপ্রেমীরা এই প্রার্থনাই এখন করছেন।