‘ওমিক্রন’ আসলে কতোটা ভয়াবহ? নতুন এই ধরণ ছাড়াও আরও নতুন কোন ধরন আসছে কিনা এবং করোনা ভাইরাসের ঠিক কতোটি ধরন আছে তা নিয়ে খোদ বিশেষজ্ঞরাই দিশেহারা। করোন ভাইরানের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ এত দ্রুত ধরন বদলাচ্ছে যে তার হিসাব রাখা বেশ কঠিন। আলফা, বিটা ডেল্টা, ওমিক্রন এবং আরো কতো কতো নাম।
বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার বলছে, আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় ওমিক্রন ধরন প্রথম বিস্তার লাভ করে। পরে সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ আফ্রিকায় পৌঁছে যায়। এবং সেখানেই প্রথম শনাক্ত হয় করোনা ভাইরাসের এই নতুন ধরনটি। তারপর সেখান থেকে চলে আসে এশিয়ার ব্যস্ততম বন্দর হংকংয়ে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত ইউরোপের চারটি দেশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ও চেক প্রজাতন্ত্রে ‘ওমিক্রন’ আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। আরেক দেশ নেদারল্যান্ডেও আক্রান্ত রোগী থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনার নতুন এ ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯। গ্রীক বর্ণমালার নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয় ‘ওমিক্রন’। নাম দিয়েই ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের এ ধরনটির বারবার জিনগত রূপ পরিবর্তন এবং বারবার এই প্রোটিন স্পাইকের গঠন পরিবর্তনের কারণে উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছে।
নেচারের নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওমিক্রন এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ বার জিনগত রূপ বদল করেছে এবং প্রোটিন স্পাইকের গঠন বদলেছে ৩০ বারেরও বেশি। আর এই প্রোটিন স্পাইক দিয়েই ভাইরাস প্রাণীর দেহকোষকে আক্রান্ত করে এবং স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করেই বেশিরভাগ টিকা তৈরি করা হয়। ফলে, এই স্পাইকের গঠন যতো বেশিবার বদলাবে এর প্রতিষধক বের করা ততো কঠিন হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশন অব অ্যালার্জি ও ইনফেশন ডিজিসের পরিচালক ড. এন্টোনি ফাউচি বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ এর রূপ বদলে ফেলার গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এই ভ্যারিয়েন্টটি ইতোমধ্যে ৩০ বারের বেশি মিউটেশন ঘটিয়েছে তার স্পাইক প্রোটিনে।
কেবল জিনগত কিংবা স্পাইক প্রোটিনের গঠন পরিবর্তন নয়। নতুন এ ধরনে বিপদের বিষয় রয়েছে আরও। যে কোন ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম প্রাণীর দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, তার নাম ‘রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন’। ওমিক্রনের ‘রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন’ও অন্তত ১০ বার রূপ পরিবর্তন করেছে। এর আগপর্যন্ত শনাক্ত সবচেয়ে সংক্রামক ‘ডেল্টা’ ধরনটির ক্ষেত্রে বাইন্ডিং রিসেপ্টর ডোমেইনের বদল ঘটেছিল মাত্র দুবার।
ফলে, সাব দিক থেকেই এই ধরনটি মানুষের জন্য নতুন হুমকি হয়ে হাজির হয়েছে। কেন না, চীনের উহান থেকে প্রথম যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছিল, ওমিক্রন তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ফলে, করোনা ভাইরাসের মূল ধরনকে মাথায় রেখে তৈরি করা বর্তমানের কোভিড টিকাগুলো নতুন এ ধরনের বিরুদ্ধে অতটা কার্যকর না-ও হতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কাওয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলছেন, “ভাইরাসটির সংক্রমণ ক্ষমতা এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা আরও বেশি। এটিই আমাদের শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে দূর্বল করার ক্ষমতাও এর রয়েছে।”
করোনা ভাইরাসের নতুন এ ধরনটি সম্পর্কে এখনো অনেককিছু জানার বাকী। করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে নতুন এই ধরনে আক্রান্ত রোগীর উপর তাদের টিকার পরীক্ষা চালানোর ষোষণা দিয়েছে। মডার্না তো নতুন টিকা উৎপাদনের কথাই বলেছে।
তাই, যতোক্ষণ না নতুন এই ধরনের কোন কার্যকর চিকিৎসা আসছে ততোক্ষণ আগের মতোই সবাইকে স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলতেই হবে।