জীবনের অর্ধশতকে সজীব ওয়াজেদ

তৌফিক হোসাইন মবিন

জুলাই ২৭, ২০২১, ১০:০৪ পিএম

জীবনের অর্ধশতকে সজীব ওয়াজেদ

'আমি মোটরসাইকেল চালাতে পছন্দ করি। ১৮ বছর বয়স থেকে বাইক চালাই, যখন ব্যাঙ্গালোরে স্নাতক করি। তখন একটা পুরনো মোটরসাইকেল চালাতাম। অ্যামেরিকায় আমি মোটরসাইকেল রেইস করতাম, প্রফেশনালি। হাত ভেঙেছিল একবার।'

কথাগুলো বলতে বলতে শার্টের হাতা খুলে কবজির পুরনো ক্ষত দেখান তিনি। এরমধ্যেই স্মরণ করিয়ে দেন, দিন-মাস-বছর পেরিয়ে আজ তিনি ৫০ পূর্ণ করা যুবক। কিন্তু রয়ে গেছেন সেই আগের তারুণ্যদীপ্ত মানসিকতাতেই। কণ্ঠে তার অসীম আত্মবিশ্বাস। কর্মমুখরতা তার প্রতিটি দিনকে ঘিরেই। আর তিনি এই কর্মমুখরতা আর আত্মবিশ্বাসটা অর্জন করেছেন বাবা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, মা শেখ হাসিনা এবং নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূত্রেই। তিনি সজীব ওয়াজেদ। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর চেয়ারম্যান। আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) তার ৫১তম জন্মদিন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই অবরুদ্ধ ঢাকায় পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা দম্পতির সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্মগ্রহণ করেন। নানী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তার নাম রেখেছিলেন ‘সজীব’, তবে বঙ্গবন্ধু আগেই নাম ঠিক করে রাখেন ‘জয়’। আর এই দুই নামের সঙ্গে তার বাবার নামের অংশ ‘ওয়াজেদ’ জুড়ে হয় সজীব ওয়াজেদ জয়।

জন্মের সময় পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ ছিলো পুরো মুজিব পরিবার। ২৭ জুলাই রাতে বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জন্মগ্রহণের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখভাল করার জন্য নানী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব থাকার অনুমতি চাইলে পাকিস্তানি সেনারা অনুমতি না দিয়ে বিরূপ আচরণ করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সে সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন জয়। পরবর্তীতে ভারতে মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। নিজের শৈশব ও কৈশোরের দিনগুলো সেখানেই কাটে তার।

পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত জীবন

নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়ালেখার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি নেন জয়। পরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

তবে বিভিন্ন সময়ে অর্থাভাবে তার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময় জাতীয় সংসদে দেশে ‘খুবই সীমিত খরচে’ লেখাপড়ার সুযোগ থাকার বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে ‘টাকার অভাবে’ একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) পুরো কোর্স শেষ করাতে পারেননি এমন আক্ষেপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে।

জয় ২০০২ সালে ২৬ অক্টোবর মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন। সোফিয়া ওয়াজেদ নামে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ

রাজনীতিতে এর আগে খুব বেশি সম্পৃক্ত না হলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্রে জয়ের বড় ধরনের ভূমিকার কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিভিন্ন সময়ে তাদের দেয়া ভাষ্য অনুসারে, নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’র ধারণা জয়ের উদ্যোগেই যুক্ত হয়েছিল। আর তা তরুণ প্রজন্মের মন কেড়ে নেয়।

সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি নাম লেখান ২০১০ সালে, আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক সদস্য হয়ে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন তিনি। ওই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর অবৈতনিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর তাকে একই পদে আবার নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম কর্তৃক ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন জয়।

আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এরও চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ। তার নির্দেশনায়ই সিআরআই একাধিক লেটস টক, পলিসি ক্যাফের মতো শো এর আয়োজন করেছে।

সিআরআইর মাধ্যমে শিশুদের জন্য গ্রাফিক নভেল মুজিব প্রকাশিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে। এ ছাড়াও ‘হাসিনা: এ ডটারস টেল’ ডকুড্রামা বা বঙ্গবন্ধুর উক্তি ও জীবনী নিয়ে আরও বেশ কিছু কাজ করে যাচ্ছে সিআরআই।

কর্মসূচি : বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের কারণে জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সীমিত কর্মসূচি আয়োজিত হবে। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমান ডিজিটাল প্রযুক্তি : পথিকৃৎ মুজিব হতে সজীব’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী যুবলীগ সারা দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিলাদ ও দোয়া এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবে।

অন্যদিকে বিকালে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও তার সুস্বাস্থ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন করেছে।

Link copied!