দেশে এখন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে সরকার। এর মধ্যেই জানা যায়, টিকা গ্রহণের পরেও দুজন ব্যক্তি ‘করোনা পজিটিভ’ হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা গ্রহণের পরও নানা কারণে একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।
করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস কারো শরীরে প্রবেশের দুই থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত কোনো উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। এটাকে সুপ্তিকাল বলে। তবে করোনায় আক্রান্তের পরপরই কারো শরীরে উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনও হতে পারে, যে দুজন আক্রান্ত হয়েছেন; টিকা গ্রহণের আগে তারা কোভিড পজিটিভ ছিলেন। আবার টিকা নেওয়ার পরও কিন্তু একজন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এই কারণেই বারবার বলা হচ্ছে যে, টিকা গ্রহণের পরও যেন মাস্ক পরা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়।’
নিম্নরূপ কারণে টিকা নিয়েও করোনা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে:
টিকা গ্রহণের ২১ দিনের মধ্যে
এ বিষয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টিকাটি গ্রহণের পর অন্তত তিন সপ্তাহ অর্থাৎ ২১ দিন পর্যন্ত ইমিউনিটি গড়তে সময় লাগে। ভালোভাবে আপনার ইমিউনিটিও গড়ে ওঠার আগে,টিকা গ্রহণের ২১ দিনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে গেলে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে।’
হেভিলি ইনফেকটেড ব্যক্তি
এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘টিকা গ্রহণকারীর পাশে যদি হেভিলি ইনফেকটেড অর্থাৎ, যার শরীরে করোনাভাইরাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত এমন কারো সংস্পর্শে যান তবে আক্রান্ত হতে পারেন। এসময় টিকা নেওয়া ব্যক্তির ইমিউনিটি পাওয়ার ওই মাত্রাতিরিক্ত ভাইরাসের কাছে হেরে যেতে পারে বা কাজ নাও করতে পারে।’
নানা রোগ আছে যাদের
এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘স্বাভাবিকভাবেই নানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। টিকা নেওয়ার পর তিনি যদি যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলেন অথবা করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যান,সেক্ষেত্রে তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
টিকা শিরায় নিলে
তিনি বলেন, ‘টিকা দেওয়ার সময় কোনোভাবে শিরার ভেতরে পুশ করানো হলে মেডিসিনটি দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে টিকাটি ভালোভাবে কাজ নাও করতে পারে।’
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টিকাটি গ্রহণের পর ইমিউনিটি বাড়তে শুরু করে। এভাবে আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি গ্রহণ করলে প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। তখন আর কারো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
যদিও এটা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো গবেষণা নেই বিশ্বব্যাপী। আসলে এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ দেশ প্রথম ডোজই দিচ্ছে। ভাইরাসটির বয়সও মাত্র এক বছর অতিক্রম করল। এসব নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে গেলে আরও সময় লাগবে।’