ছবি: সংগৃহীত
জীবনে একবার হলেও বিষণ্নতায় ভোগেনি- এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনের এই জটিল পরিস্থিতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানসিক রোগ হিসেবে তখনই ধরা হয় যখন দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্নতায় ভুগতে থাকে কেউ।
এ নিয়ে সিএনএন ডটকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে মার্কিন চিকিৎসক ক্রিস ইলিয়াডস-এর বরাতে বলা হয়, “নিজের না হলেও আশপাশে পরিচিত অনেকেই এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। তাই বিষণ্নতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজনীয়।”
পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি বিষণ্নতায় ভোগে
নারীরা প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি পরিমাণে বিষণ্নতায় ভুগতে পারে পুরুষদের চাইতে। এজন্য আংশিকভাবে দায়ী হরমোন।
গর্ভধারণের পর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে নারীরা বিষণ্নতায় ভুগতে পারেন। সন্তান জন্ম দেওয়া পর্যন্ত সেটা চলে। পাশাপাশি পারিবারিক দায়িত্ব ও চাপ থেকেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
আর পার্থক্য হল পুরুষদের চাইতে নারীরা সমস্যাগুলো চিকিৎসকদের কাছে ভালোভাবে বর্ণনা করে সাহায্য নিতে পারে।
জিন বা বংশানুর প্রভাব বেশি
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিষণ্নতার জন্য ৫০ শতাংশ দায়ী হল জিন বা বংশগতি। আর সেটা হয়ত বাবা-মা দুজনের কাছ থেকেই আসতে পারে।
যাদের বাবা-মা বা ভাইবোনদের বিষণ্নতার সমস্যা আছে, তাদের এই সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা অন্যদের চাইতে দুতিন গুন বেশি। বিষণ্নতার মাত্রা যত বেশি ততই বংশগতি প্রভাব থাকবে।
অন্যান্য কারণে মধ্যে আছে- শিশুকালে নির্যাতনের শিকার, বাবা-মায়ের অকাল মৃত্যু, চরম চাপ। আবার অনেক সময় বিষণ্নতায় ভোগার কোনো কারণ থাকে না।
প্রথমবারের চিকিৎসায় উপকার নাও হতে পারে
মারাত্মক বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর মধ্যে ৫০ শতাংশের কোনো উপকার মেলে না প্রথম পর্যায়ের চিকিৎসায়।
ডাক্তাররা এই ধরন এর নাম দিয়েছে ‘ট্রিটমেন্ট-রেজিসট্যান্ট ডিপ্রেশন’- এর মানে হল, ছয় সপ্তাহের চিকিৎসার পরও বিষণ্নতা কমে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটার সাথে বংশগতির জোড়ালো সম্পর্ক রয়েছে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তনে উপকার পাওয়া যায়।
কথার থেরাপি ওষুধের মতোই কাজ করে
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলে, থেরাপি নিয়ে অনেক মানুষের উপকার হয়। অনেকের আবার এর সাথে ‘অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট’ ওষুধও সেবন করতে হয়।
তবে কম ও মাঝারি পর্যায়ের বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর জন্য কথোপকথন থেরাপি বা চিকিৎসা পদ্ধতি সেরা।
আর বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যদি ওষুধের দরকার হয় তবে এর সাথে কথোপকথন থেরাপি নিলে আরও ভালো কাজ করে।
ভুল দেখা বা শোনা
বিষণ্নতায় ভুগলে সত্যি নয় এমন কিছু দেখতে বা শুনতে পারে রোগী। একে বলে ‘সাইকোটিক ডিপ্রেশন’। পারিবারিকভাবে বিষণ্নতায় ভোগার ইতিহাস থাকলে ‘সাইকোটিক ডিপ্রেশন’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বিষণ্নতা কাটাতে চৌম্বকীয় পদ্ধতি
এটা আধুনিক চিকিৎসার একটি অংশ। বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর মাথায় তারের কয়েল বা কুণ্ডলী পরিয়ে চুম্বক শক্তির মাধ্যমে ক্রমাগত স্পন্দন দেওয়া হয়।
এর জন্য অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে না। মাথায় হালকা স্পন্দন অনুভূত হয়। প্রতিটি সেশন চলে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট।
যাদের ওষুধে কাজ হয় না তাদেরকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডাক্তাররা চার থেকে ছয় সপ্তাহ ধরে ২০টি সেশন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শিশুরাও বিষণ্নতায় ভুগতে পারে
৩০ জনের মধ্যে একজন শিশু বিষণ্নতায় ভুগতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- বন্ধুদের বা খেলাধুলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। স্কুলে ভালো ফল না করা। এমনকি বিরক্তও করতে পারে।
এছাড়া শারীরিক আঘাত পেয়েছে এমন অনুযোগ করে পড়েও থাকতে পারে। এটা একটা মারাত্মক লক্ষণ। তবে বেশিরভাগ সময় সেটা অবহেলা করা হয়।
এসব কারণে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ শিশু মানসিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়।
তবে মনে রাখতে হবে, বড়দের মতো শিশুদের সেবা দিলেও বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।