জুলাই ১২, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এটির পেছনে পাখির আঘাত নয়, বরং জ্বালানি সিস্টেমে ত্রুটি ছিল মূল কারণ।
ওই দুর্ঘটনায় মোট ২৬০ জন প্রাণ হারান, যার মধ্যে ২৪১ জন ছিলেন যাত্রী এবং ১৯ জন ভূমিতে অবস্থানরত ব্যক্তি।
এটি ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাটি থেকে কেবল একজন যাত্রী জীবিত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI171 বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কিন্তু উড্ডয়নের কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবন্দরের প্রায় ০.৯ নটিক্যাল মাইল দূরে একটি মেডিকেল হোস্টেল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।
প্রকাশিত ১৫ পৃষ্ঠার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটির দুইটি ইঞ্জিনই মাঝ আকাশে বন্ধ হয়ে যায়।
মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে উভয় ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থায় চলে যায়, ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।
ককপিটের ভয়েস রেকর্ডিংয়ে দেখা যায়, এক পাইলট ইঞ্জিন বন্ধের কারণ জানতে চান, অপরজন জানান, সেটি তিনি করেননি।
ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জরুরি শক্তি সরবরাহকারী র্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়, যা সিসিটিভি ফুটেজেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পাইলটরা ইঞ্জিন পুনরায় চালুর চেষ্টা করেন। ইঞ্জিন ১ আংশিকভাবে সচল হলেও, ইঞ্জিন ২ ক্র্যাশের আগ পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। পুরো উড়োজাহাজটি মাত্র ৩২ সেকেন্ড আকাশে ছিল।
বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষে থ্রাস্ট লিভারগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পাওয়া গেলেও, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারের তথ্যে দেখা যায়, টেকঅফ থ্রাস্ট তখনও সক্রিয় ছিল—যা ইঙ্গিত দেয়, হয়তো কোনো যান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতা বা ত্রুটি ঘটেছিল।
জ্বালানির মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
উড্ডয়নের সময় ফ্ল্যাপের অবস্থান, গিয়ারের অবস্থা সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে—পরিষ্কার আকাশ, ভালো দৃশ্যমানতা এবং হালকা বাতাস।
তদন্তে আরও জানা যায়, উভয় পাইলট শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং এই মডেলের বিমান পরিচালনায় অভিজ্ঞও ছিলেন।
কোনো নাশকতার প্রমাণ মেলেনি, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) আগে থেকেই ফুয়েল কাটঅফ সুইচে সম্ভাব্য ত্রুটির বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তবুও সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজে সেই অনুসারে কোনো পরিদর্শন করা হয়নি।
উড়োজাহাজটি ওজন ও ভারসাম্যের সীমার মধ্যেই ছিল এবং এতে কোনো বিপজ্জনক সামগ্রী বহন করা হচ্ছিল না। তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে এবং বিশেষভাবে ফুয়েল কন্ট্রোল সিস্টেমে যান্ত্রিক বা কাঠামোগত ত্রুটি নিয়ে বিশ্লেষণ চালানো হচ্ছে।