জুলাই ১২

পুলিশি বলপ্রয়োগের মধ্যেও অব্যাহত শিক্ষার্থী আন্দোলন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১২, ২০২৫, ০৩:২২ পিএম

পুলিশি বলপ্রয়োগের মধ্যেও অব্যাহত শিক্ষার্থী আন্দোলন

২০২৪ সালের ১২ জুলাই, পুলিশি বল প্রয়োগের মধ্যেও দেশব্যাপী সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা অব্যাহত রেখেছে তাদের আন্দোলন।

ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও এবং সরকারি সতর্কবাণী উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন শহর ও জেলায় ব্যাপক পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে সংগঠিত এই বিক্ষোভ কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্রতা লাভ করেছে। ১১ জুলাই, পুলিশ রাস্তা অবরোধকারী ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ছুঁড়ে এবং ফাঁকা গুলি চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে আহত করে। এর পরও শিক্ষার্থীরা পরের দিন ফের সড়কে নামে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং এক ঘণ্টারও বেশি সময় ওই এলাকা অবরোধ করে রাখেন। পরে ঢাকার ঢাকা কলেজের ছাত্ররাও শাহবাগে যোগ দিয়ে পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে স্লোগান দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সমাবেশে আন্দোলনের সমন্বয়কারী আবু বকর মজুমদার জানিয়েছেন, তারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং ৬৪ জেলার মধ্যে অনলাইন ও অফলাইন সম্মেলন করে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন। ১৩ জুলাই বিকেলে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানান তিনি।

রাজধানীর বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল ও মশাল মিছিল করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ঢাকা-রাজশাহী রেললাইনে অবরোধ করেন। চট্টগ্রামে শোলসোহর রেল স্টেশন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আলমাস মোড়ে শেষ হয়।

রংপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, বগুড়া ও নোয়াখালিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা র‌্যালি, মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন। মনিকগঞ্জে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে বাধা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগ।

সরকার পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান দেখা যায়। ওই রাতেই শাহবাগ থানায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের যানবাহন ভাঙচুর এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিরাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে রয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্দোলনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে আন্দোলন শেষ করবে, না হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আন্দোলনকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির দ্বারা প্রভাবিত বলে অভিযোগ করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১২ জুলাইয়ের এই ঘটনাবলি দেশের ছাত্র সমাজের ন্যায় ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে দৃঢ় অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে। পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা জনমতও তুলে ধরে যে, আন্দোলনের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।

Link copied!