হেমায়েতপুরে বেহাল অবস্থায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রুমন জোয়ার্দ্দার জনি, সাভার প্রতিনিধি

জুলাই ৭, ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম

হেমায়েতপুরে বেহাল অবস্থায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ছবি: সংগৃহীত

টানা এক বছর ধরে সাভারের হেমায়েতপুর-ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। জনদূর্ভোগ আর যানজটে দূরপাল্লার যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হেমায়েতপুরের একেএইচ গার্মেন্টস থেকে শুরু করে চলন্তিকা আবাসিকের সামনে পর্যন্ত রাস্তা যেমন খানাখন্দ তেমনি রয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা। এই খানাখন্দে পড়ে হর-হামেশাই বিকল হয়ে যায় গাড়ি, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। মাঝে মধ্যে ড্রেনের ময়লা দূর্গন্ধ পানির মধ্যে অটোরিকশা উল্টে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

গত ০৫ জুলাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর সড়কটির বর্তমান অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন দ্য রিপোর্ট লাইভের প্রতিনিধি রুমন জোয়ার্দ্দার জনি।

সরেজমিনে মহাসড়কের মধ্যে হঠাৎ একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা উল্টে পড়তে দেখা যায়। এতে অটোরিকশার মহিলা ও শিশু যাত্রীরা গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

এ বিষয়টি হেমায়েতপুর লালন টাওয়ার বিল্ডিংয়ের সামনে ঘটলে লালন টাওয়ার বিল্ডিংয়ের মালিক মোঃ হাসিব্বুজামাল লালন নিজ উদ্যোগে দুই ভ্যান ইট এনে ভাঙা জায়গাটি কিছুটা হলেও ভরাটের চেষ্টা করেন।

এ বিষয় লালন বলেন, “মাঝে মধ্যেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে কখনো বাস, ট্রাক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রিকশা অটোরিকশা যাত্রীসহ উল্টে যাচ্ছে যা আজও হয়েছে। বিষয়টি জানার পর রাস্তাটি মেরামত করার জন্য লোকজন পাঠিয়ে দেই এবং আমি প্রায়ই ইট এনে ভরাট করে দেই। কারণ এটি আমার মার্কেটের সামনে আর মানুষ আমাকে এসে যখন বলেন আমি খুব ইমোশনাল হয়ে যাই।”

শাহজাহান নামের একজন এলাকাবাসী বলেন, “এই যে দেখছেন নিজের হাতে ইট বিছিয়ে দিচ্ছি সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে। তবে এই ইটগুলো লালন টাওয়ার বিল্ডিংয়ের মালিক দিয়েছেন।”  

অটোরিকশা চালক আজগর শেখ, যিনি ৬ বছর ধরে হেমায়েতপুর বসবাস করেন, তিনি বলেন, ‘এই রাস্তায় এতো কষ্ট হয় যে, এদিকে গাড়ি নিয়ে, যাত্রী নিয়ে আসতে পারিনা। এদিকে আসলেই গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য কামাইও (রোজগার) কম হয়।”  

এই রাস্তা দ্রুত ঠিক করলে গরিবদের জন্য ভালো হয় বলেও জানান তিনি।  

এদিকে এই খানাখন্দময় সড়ক সংস্কারের কোন সরকারি উদ্যোগ বা পদক্ষেপ দীর্ঘ এক বছরের মধ্যে দেখা যায়নি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। তিনি কে এবং কেন ভিডিও করছেন জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে কোন উত্তর না দিলেও একসময় বলেন, “আমি মহাসড়কের লোক আমি আমার স্যারের নির্দেশে এসেছি আর এই ভিডিও স্যারকে পাঠিয়ে দেব।”

মহাসড়কের কর্মচারী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে তার নাম জিজ্ঞেস করা হলে তিনি তার নাম বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এদিকে ৭ জুলাই, ২০২৫ তারিখে কল্যাণপুর সড়ক অফিসে গিয়েও এ সড়কের বিষয়ে কোন কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  

কল্যাণপুর সড়ক উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রোকৌশলী (সওজ) এএসএম তানভীর হামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হেমায়েতপুর-ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

শুরুতে তিনি কিছু বলতে চাননি। তিনি বরং প্রতিবেদককে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। আসুন।

পরে এক পর্যায়ে এএসএম তানভীর হামিদ বলেন, “হেমায়েতপুর সার্ভিস লাইনের কাজটি বিগত ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কর্তৃক প্রাককালীন অনুমোদন হয়েছে। পরবর্তী বিধি মোতাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ ঢাকা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অনুমোদনের প্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ার পরবর্তী সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এখনো কোন ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়া যায়নি।”

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সড়কের মেরামত কাজের জন্য প্রায় ৬/৭ মাস আগে প্রায় ২০ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। টেন্ডার হওয়ার এতদিন পরেও কেন এই সড়ক মেরামত বা সংস্কার করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তানভীর হামিদ বলেন, “এ সংক্রান্ত কোন তথ্য আমার দপ্তরে আসেনি। সুতরাং আমি এ সম্পর্কে অবগত না।”  

এই কর্মকর্তা জানান, ২০ কোটি নয় “১৭ কোটির কিছু বেশি টাকার টেন্ডার হয়েছে। তবে কন্ট্রাক্টর কত টাকা দর দেবেন, সেটা আমরা জানি না।”

তিনি আরও বলেন, “আমার দপ্তরে তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২৫ প্রাক্কালে অনুমোদন এবং পরবর্তীতে টেন্ডার হয়েছে।”  

কতদিনের মধ্যে এই সড়কের মেরামত ও সংস্কার কাজ শুরু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তানভীর হামিদ বলেন, “সাধারণত ১৭/১৮ কোটি টাকার টেন্ডার ৬/৭ মাসের মধ্যে হয়ে থাকে তবে এটা কেন দেরি হচ্ছে বুঝতে পারি না। তবে আমি বলতে পারি খুব শীঘ্রই আমরা ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাবো এবং কাজ শুরু করে দিবো বলে আস্বস্ত করতে পারি।”

Link copied!