এনবিআর আন্দোলনে ‘সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভিন্নভাবে’ দেখার বার্তা চেয়ারম্যানের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৭, ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

এনবিআর আন্দোলনে ‘সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভিন্নভাবে’ দেখার বার্তা চেয়ারম্যানের

ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলনে নামার কারণে ‘সাজার ভয়ে’ থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মীদের ‘অভয়’ দিলেও ‘সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভিন্নভাবে’ দেখার বার্তা দিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

সোমবার, ০৭ জুলাই ঢাকা কাস্টম হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, “আমিসহ আমরা যারা এখানে আছি, আমরা কেউই অপরিহার্য নই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র অপরিহার্য। আমাদের কাস্টম হাউজ ঢাকা অপরিহার্য; কাস্টম হাউজ চিটাগং অপরিহার্য; কাস্টম হাউজ বেনাপোল, কাস্টম হাউজ মোংলা, প্রত্যেকটা শুল্ক স্টেশন অপরিহার্য।

“রাজস্ব আহরণের যতগুলো দপ্তর আছে, ট্যাক্সেস অফিস, ভ্যাট কমিশনারেট আছে, এগুলো প্রত্যেকটাই অপরিহার্য। তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখাটা অপরিহার্য; এর কোনো বিকল্প নাই।”

তিরি বলেন, “কারা কাজ করবে, সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু এগুলোর অপারেশন কোনোভাবেই যেন হ্যাম্পার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি।”

আবদুর রহমান খানের অপসারণসহ বেশ কিছু দাবিতে গত সপ্তাহে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে নামেন এনবিআরকর্মীরা। সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরলেও বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর আর বদলির আতঙ্কে থাকার কথা বলছেন সংস্থাটির কর্মীরা।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গও ওঠে। সেখানে সাংবাদিকদের তরফে জানতে চাওয়া হয়, আন্দোলন ঘিরে যে আস্থার সংকট সৃষ্ট হয়ে তা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এই যে, এর জন্যই তাদের কাছে চলে এলাম; তাদেরকে অভয় দেওয়ার জন্য। প্রত্যেকে যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, নিজেদের দায়িত্ব ঠিকঠাক সম্পন্ন করে, তাহলে আমি মনে করি না যে তাদের ভয়ের কোনো কারণ আছে।

“আর কেউ কেউ হয়ত একটুএকটু না অনেক বড় আকারেই, যেটা আমরা বলব সীমালঙ্ঘন করেছে, সেটা হয়ত ভিন্নভাবে দেখা হবে। তবে সাধারণভাবে আমার মনে হয় না যে কারো কোনো ভয়ের কারণ আছে।”

সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তিনটি সফটওয়্যারও উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের সাময়িক তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।

বলেন, “আমি একটু আগে রেভেনিউ ফিগার পেলাম। এটা নিয়ে আমাদের বেশ ইয়ে ছিল; ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ৩০ জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে।

“এটাও পরিবর্তন হবে; আরেকটু বাড়বে। কারণ আমাদের বুক এডজাস্টমেন্টে সাধারণত দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়। তাতে করে আমার ধারণা যে এটা আরও বাড়বে।”

এনবিআরে সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে জুনে চেয়ারম্যানকে অপসারণে এনবিআরে আন্দোলন শুরু হয়।

মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।

সরকারের এমন ঘোষণাতেও আন্দোলন অব্যাহত থাকলে তিন দিন পর (২৫ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর বিলুপ্ত হবে না, বরং এ সংস্থাকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এজন্য ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশে সংশোধন আনার কথাও বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম।

পরের দিন (২৯ জুন) কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানায় সরকার। এ আহ্বানে সাড়া না দিলে ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।

দিনভর নানা নাটকীয়তার পর রাতে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র।

ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।

Link copied!