ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম
সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন দুরবস্থায় থাকা পাঁচ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকটির চূড়ান্ত লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত সেপ্টেম্বর থেকে যে সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তার অংশ হিসেবেই ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংককে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫–এর আওতায় এনে একীভূত করা হয়েছে। এর আগে এসব ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
গত ৯ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংকটাপন্ন পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে নতুন এক রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরে ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) ইস্যু করে। এর শর্ত অনুযায়ী নতুন ব্যাংকের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে এবং নির্ধারিত ৩৫ হাজার কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসবে আমানতকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে।
চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়াকে নবগঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তারল্য সংকট মোকাবিলায় বারবার সহায়তা দেওয়া হলেও একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি; বরং শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের দাম কমে গেছে এবং অধিকাংশ ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একীভূতকরণের পথ বেছে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মূলধনের দিক থেকে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডিপোজিট সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত পুরোপুরি নিরাপদ। একীভূতকরণের পর এসব আমানত দ্রুত পরিশোধ করা হবে। দুই লাখ টাকার বেশি আমানতের পরিশোধ পরিকল্পনাও শিগগির প্রকাশ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা প্রকাশ করেছে, নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পেশাদার ব্যবস্থাপনায় নতুন ব্যাংকটি অল্প সময়ের মধ্যেই একটি আধুনিক, গতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে গড়ে উঠবে। সরকারের লক্ষ্য হলো ব্যাংকিং খাতে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং খাতটিকে আরও শক্তিশালী, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা।