দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল সংযোগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৫১ এএম

দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেল সংযোগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আঞ্চলিক যোগাযোগ সম্প্রসারণ এবং স্থানান্তরিত উৎপাদন কারখানা থেকে রফতানি সহজতর করতে বাংলাদেশকে দক্ষিণ চীনের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন চীনা অবকাঠামো সংস্থাগুলোর প্রতি।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। তার সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ইনস্টিটিউট অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রেসিডেন্ট ড. মা জুন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শিল্পকারখানা স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর অবস্থিত এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য বাজারের নৈকট্য রয়েছে—যা উৎপাদন ও রফতানির জন্য কৌশলগত সুবিধা সৃষ্টি করে। তার মতে, অঞ্চলটিতে সমুদ্রে বিস্তৃত প্রবেশাধিকার থাকায় চীনা শিল্পগুলো এখানে স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে উৎপাদিত পণ্য চীনসহ ধনী দেশগুলোতেও রফতানি করা সম্ভব।

ইয়াং ডংনিং জানান, অধ্যাপক ইউনূসের স্বপ্নের উৎপাদন রূপান্তরকে সমর্থন দিতে চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের সবুজ প্রযুক্তি, পাট, টেক্সটাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। তিনি বলেন, চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে, তবে এখন বিনিয়োগকারীরা মূল উৎপাদন খাতে ক্রমশ মনোনিবেশ করছেন—যার মধ্যে ছাদে সোলার প্যানেল, সবুজ জ্বালানি, জৈব সার এবং পাটভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে বৃহৎ বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ও এক্সিম ব্যাংক এই সরাসরি উৎপাদন বিনিয়োগেও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

ড. মা জুন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট শিল্প এখন চীনা বিনিয়োগকারীদের বড় আগ্রহের খাত। তারা বাংলাদেশি অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়তে চান এবং সবুজ জ্বালানি, সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে এক মিলিয়ন টন পর্যন্ত পাট ব্যবহার করতে প্রস্তুত। তার মতে, চীনা অর্থায়নে পাট খাতে যৌথ উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।

চীনের এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোসহ চীনে রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনের একটি শক্তিশালী উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে সহায়তা করতে পারে। তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চীনা বিনিয়োগের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

চীনের সৌরশক্তি খাতে নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সৌর প্যানেল ও রুফটপ সোলার সিস্টেমে বিনিয়োগ বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানিতে রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। পাটভিত্তিক উৎপাদনে চীনা আগ্রহের বিষয়টিও তিনি স্বাগত জানান।

ইয়াং ডংনিং আরও জানান, চীনা সংস্থাগুলো এআই ও ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজছে—যেসব ক্ষেত্রে চীন এখন বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে।

বৈঠকের শুরুতে হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টে অগ্নিকাণ্ডে বহু প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সাক্ষাৎকালে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!