জুলাই ১২, ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার মূল কারণ ছিল ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব—এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার, ১২ জুলাই, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৫টা ৪০ থেকে ৬টার মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে ঘটনাটি ঘটে।
সোহাগকে একদল লোক প্রকাশ্যে নির্মমভাবে আক্রমণ করে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দুজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ডিসি জসীম জানান, নিহত সোহাগ ও অভিযুক্তরা একসময় একসঙ্গে ভাঙারি ব্যবসা করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক লেনদেন ও অংশীদারিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যা শেষ পর্যন্ত এ ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।
হত্যাকাণ্ডের পর ১০ জুলাই সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর ৭) দায়ের করেন।
সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে— যাদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ এবং দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি জসীম বলেন, “আমরা অপরাধের তদন্ত করছি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। এখন পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ মেলেনি।”
চাঁদাবাজির বিষয়েও তিনি গুজব নাকচ করে দিয়ে বলেন, “এ ঘটনায় কোনও সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র বা প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজির তথ্য পাওয়া যায়নি। এটি একান্তই ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফল।”
পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, “ঘটনার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সেখানে পৌঁছে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।”
সংবাদ সম্মেলনে পুরান ঢাকায় অতীতের কয়েকটি সহিংস ঘটনার প্রসঙ্গও উঠে আসে— যেমন চকবাজারে একটি কোকারিজ মার্কেট দখল নিয়ে গোলাগুলি এবং বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে রাজনৈতিক কর্মীদের সংঘর্ষ। এসব প্রসঙ্গে ডিসি জসীম বলেন, “উক্ত দুটি ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এসব আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি না, বরং দেখি কে অপরাধী এবং কী অপরাধ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি—পুরান ঢাকার ব্যবসা এলাকায় চাঁদাবাজ থাকবে, না লালবাগ ডিভিশনের পুলিশ থাকবে, তা ব্যবসায়ীদেরই ঠিক করতে হবে। আমরা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করব না।”
লাল চাঁন সোহাগকে হত্যার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একদল লোক তাঁকে নির্মমভাবে ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে, তাঁর শরীর থেঁতলে দেয়, বিবস্ত্র করে এবং তাঁর ওপর উঠে লাফায়। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড সারাদেশে নিন্দা ও বিচার দাবির ঝড় তোলে।