জুলাই ১২, ২০২৫, ১১:২৭ এএম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার, ১১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার মাস আগে সায়মার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোতে দুর্নীতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস এক অভ্যন্তরীণ ইমেইলের মাধ্যমে জানান, সায়মা ওয়াজেদ ছুটিতে থাকবেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারী মহাপরিচালক ক্যাথারিনা বেম ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বেম আগামী মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ভারতের নয়াদিল্লিতে এসইএআরও কার্যালয়ে দায়িত্ব নেবেন।
দিল্লিতে জাতিসংঘের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সায়মার ছুটি চার মাসের জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সায়মার দায়িত্ব পালন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা। গত বছর আগস্টে এক জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেন।
সায়মার নিয়োগের পেছনে তাঁর মায়ের রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিতর্কের মধ্যেই সায়মা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসইএআরওর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
এ বছরের শুরুতেই দুদক তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ডব্লিউএইচওর পদে নিয়োগ পেতে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, যা দণ্ডবিধির ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারা অনুযায়ী জালিয়াতি ও প্রতারণার শামিল।
আরও অভিযোগ রয়েছে, সায়মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি অনারারি পদে রয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।
এই ভুয়া দাবি তিনি ডব্লিউএইচওতে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া সূচনা ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২৮ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল সংগ্রহের অভিযোগও রয়েছে, তবে সেই অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে, সে বিষয়ে মামলায় বিস্তারিত উল্লেখ নেই।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা ও অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর সায়মা ওয়াজেদের ওপর ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত।