জুলাই ৯, ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
হাসাপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন লালনগীতির শিল্পী ফরিদা পারভীনের শারীরিক পরিস্থিতি ‘ভালো নয়’ বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শিল্পীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।
বুধবার, ০৯ জুলাই দুপুরে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ফরিদা পারভীনকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল।
সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, ‘‘লালন সঙ্গীতে ফরিদা পারভীন অদ্বিতীয় এবং গোটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে লালন সঙ্গীতের প্রিয় শিল্পী তিনি। দীর্ঘকাল ধরে তিনি সঙ্গীত জগতে যে তার একচ্ছত্র প্রভাব সেটা তিনি অক্ষুন্ন রেখেছেন।
“তিনি অসুস্থ হয়ে এখানে এসেছেন অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে। তার কিডনির সমস্যা আছে, মূলত কিডনির সমস্যা তবে অন্যান্য সমস্যা আছে। উনার অবস্থা বেশ ক্রিটিক্যাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার সাহেবরা তার যথেষ্ট কেয়ার নিচ্ছেন।”
ফরিদা পারভীনের উন্নত চিকিৎসায় ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘আমার আহ্বান সরকারের কাছে যে, এরকম একজন গুণী শিল্পী যিনি বিশ্বে সমাদৃত তার চিকিৎসার জন্য তাদের স্পেশাল বোর্ড গঠন করা উচিত এবং অবিলম্বে আমি আহ্বান জানাব যে, বোর্ড গঠন করে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা বিদেশে দরকার হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে, এটা জাতি চায়।
“এই কাজটা আমি অনুরোধ করব, আহ্বান জানাব যে, প্রধান উপদেষ্টাকে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নেবেন তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।”
৭১ বছর বয়সী ফরিদা পারভীন কেবল কিডনি সমস্যা নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাঝেমাধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় তাকে।
ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসিইউতে নেওয়া হয় ৫ জুলাই।
এর মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় গায়িকার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরিবার থেকে ‘ভুয়া খবর’ না ছড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া তিনি এবার হাসপাতালে যাওয়ার পর সরকারকে এই শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
এরপর এই শিল্পীর চিকিৎসায় সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হলে, তার পরিবার জানিয়েছে টাকাপয়সা নয়, শিল্পীর চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা প্রয়োজন আছে তাদের।
এ দিন হাসপাতালে বিএনপি মহাসচিব শিল্পীর শয্যার পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি চিকিৎসকদের কাছ থেকে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং করণীয় জানতে চান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, “মহাসচিব স্যার এই বরণ্যে শিল্পীর সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং শিল্পীর চিকিৎসার জন্য তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।”
মির্জা ফখরুল ফরিদার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাসপাতালে বসে কথাবার্তা বলেছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশেষ সহযোগিতা তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এই সময়ে বিএনপির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জল, সহ সংস্কৃতিক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রোকনসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান শুরুর পর লালনসংগীত দিয়ে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পান ফরিদা পারভীন। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে তিনি লালনসংগীতের তালিম নেন।
সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।