আবুল বারকাত কারাগারে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১১, ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম

আবুল বারকাত কারাগারে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি মামলায় অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

শুক্রবার, ১১ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানা এ আদেশ দেন।

এর আগে অ্যাননটেক্সের ২৯৭ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির মামলায় অর্থনীতিবিদ এবং জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেছে দুদক।

দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক মোহাম্মম শাহজাহান মিরাজ।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, “মামলাটি তদন্তাধীন। আসামির জামিনের জোর আপত্তি জানাচ্ছি। জামিন পেলে আসামি আত্মগোপন করতে পারেন এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন অথবা তদন্ত কাজতে প্রভাবিত করতে পারেন।”

বৃহস্পতিবার রাতে ধানমণ্ডির ৩ নম্বর সড়কের বাসা থেকে অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। তবে মূলত বড় অঙ্কের বিতরণ ঘটে ২০১৩-১৪ সময়কালে, যখন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক আবুল বারকাত প্রথম ওই দায়িত্ব পান ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

এক সময় ভালো ব্যাংকের কাতারে থাকা জনতা ব্যাংক বারাকাতের অধীনে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- জনতা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন ও পরিচালক মো. আবু তালহা; জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক (পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও) আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ব্যবস্থাপক (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, এসএমই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মো. গোলাম ফারুক, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, এফসিএ মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, মিসেস সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ।

এছাড়া আসামির তালিকায় আছেন অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। 

এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড জমির মালিক হওয়ার আগেই সেই জমি নিজেদের বলে দাবি করে এবং সেখানে স্থাপনা দেখিয়ে ব্যাংকে বন্ধক রাখে। সেই জমিতে বাস্তবে কোনো স্থাপনা বা কারখানা না থাকার পরও আসামিরা ‘পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, মিথ্যা নথি তৈরি, জালিয়াতির’ মাধ্যমে সেই আবেদন মূল্যায়ন করেন।

স্থাপনাবিহীন ৩ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকার জমির মূল্যায়ন করা হয় ১৬৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মাধ্যামে ঋণ অনুমোদন, বিতরণ এবং গ্রহণের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আসামিরা ‘আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে জড়িতদের ভূমিকা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এক নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেনকে জমি ও স্থাপনার মূল্য বাড়িয়ে দেখাতে ‘সহায়তা’ করেছেন অন্য ২০ আসামি।

মামলার দুই নম্বর আসামি মেসার্স সুপ্রভ স্পিনিংয়ের পরিচালক মো. আবু তালহা কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই কোম্পানির আয়ব্যয়, ভালো-মন্দের সুবিধাভোগী। তার ‘জ্ঞাতসারে’ এবং সম্মতিতে ‘মিথ্যা নথি ব্যবহার ও জালিয়াতি’ করে জনতা ব্যাংকের টাকা ‘আত্মসাৎ’ করা হয়েছে। তাতে সহায়তা করেছেন অন্য আসামিরা।

অভিযোগে বলা হয়, ‘অবৈধভাবে ঋণ পেতে ও টাকা আত্মসাতে সহায়তা’ করেছেন জনতা ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক আব্দুছ ছালাম আজাদ, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক আজমুল হক, সাবেক এজিএম অজয় কুমার ঘোষ, সাবেক ম্যানেজার (শিল্প ঋণ-১) মো. গোলাম আজম, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, এসইও মো. এমদাদুল হক।

জনতা ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. আব্দুল জব্বার, মো. গোলাম ফারুক ও ওমর ফারুক বলেছিলেন, প্রস্তাবিত ঋণটি মঞ্জুর হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশাসন লঙ্ঘন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে ঋণ মঞ্জুরের জন্য সুপারিশ করেছেন আসামিরা।

অ্যাননটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ বাদল সুপ্রভ স্পিনিংয়ে অনুকূলে মঞ্জুর করা ১৮০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গ্রহণের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত, সাবেক পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ, মো. ইমদাদুল হক, নাগিবুল ইসলাম দীপু, ড. আর এম দেবনাথ, মো. আবু নাসের, সঙ্গীতা আহমেদ, নিতাই চন্দ্র নাথ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘ঋণ পেতে ও আত্মসাতে সহায়তা করেছেন বলে দুদকের অভিযোগ।

দুদক বলছে, ঋণ গ্রহীতা একজন ‘নাম সর্বস্ব ব্যবসায়ী’ জেনেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক সহকারী পরিচালক ইসমত আরা বেগম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর-২ আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান ও সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ঋণ পেতে ও আত্মসাতে ‘সহায়তা’ করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব পান আতিউর রহমান।

এজাহারে বলা হয়েছে, ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশনে ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর কর্মরত যুগ্ম-পরিচালক-২, উপ-মহাব্যবস্থাপক-২, মহাব্যবস্থাপক, নির্বাহী পরিচালক-১০ এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও নাম, ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক না দেওয়ায় তাদের এজাহারভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে মামলা তদন্তকালে তাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।

Link copied!