বালু ও ধুলিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ দেশের ৩৩০ মিলিয়ন মানুষ: জাতিসংঘ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১২, ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

বালু ও ধুলিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ দেশের ৩৩০ মিলিয়ন মানুষ: জাতিসংঘ

বিশ্বব্যাপী বালু ও ধুলিঝড় এখন ১৫০টিরও বেশি দেশে প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছেযা জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকি তৈরি করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্যে সংস্থাটির প্রতিনিধি লরা প্যাটারসন জানান, প্রতিবছর প্রায় ২০০ কোটি টন ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়েযা প্রাচীন মিশরের গিজার ৩০০ পিরামিডের সমান ভার।

তিনি জানান, এই ধুলার ৮০ শতাংশের বেশি উৎস আফ্রিকার সাহারা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চল হলেও এর প্রভাব বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃতধুলিকণা মহাদেশ ও মহাসাগর পেরিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার ভেসে যেতে পারে।

শনিবার ‘আন্তর্জাতিক বালু ও ধুলিঝড় প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সালকে ‘বালু ও ধুলিঝড় মোকাবিলার দশক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

সাধারণ পরিষদের সভাপতি ফিলেমন ইয়াং (একজন সহসভাপতির মাধ্যমে বক্তৃতায়) বলেন, বালু ও ধুলিঝড় হচ্ছে বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে উপেক্ষিত অথচ ব্যাপক বিস্তৃত একটি সংকট, যা জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিক্ষয় এবং অপ্রয়োজনীয় ভূমি ব্যবহারের কারণে বাড়ছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের ঝড় থেকে উত্পন্ন বায়ুকণার কারণে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করেন, যাদের বেশিরভাগই শ্বাসতন্ত্র ও হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কৃষিখাতে এসব ঝড় ফসলের উৎপাদন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়, যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অভিবাসন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

জাতিসংঘের পশ্চিম এশীয় আঞ্চলিক সংস্থার নির্বাহী সচিব রোলা দাশতি জানান, এসব ঝড়ের অর্থনৈতিক ক্ষতি অত্যন্ত বিপুল। শুধু মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে এ ধরনের ঝড়ে বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ওই অঞ্চলের মোট জিডিপির ২.৫ শতাংশ।

তিনি ইরাকের সাম্প্রতিক বড় ধরনের ধুলিঝড়ের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলো উপচে পড়েছিল। একইসঙ্গে কুয়েত ও ইরানে ধুলিঝড়ের কারণে স্কুল ও অফিস বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। সাহারার ধুলা এমনকি ফ্লোরিডা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেও পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।

রোলা দাশতি, যিনি জাতিসংঘের বালু ও ধুলিঝড় মোকাবিলা কোয়ালিশনের সহসভাপতিও, বলেন২০টির বেশি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এখন একযোগে কাজ করছে আগাম সতর্কবার্তা জোরদার এবং স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায়।

তিনি বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোকে আহ্বান জানান যেন তারা এই সংকট মোকাবিলার কৌশলকে জাতীয় ও বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে।

ভূমি পুনরুদ্ধার, টেকসই কৃষি ও আধুনিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থাসবই আমাদের হাতে আছে,” বলেন দাশতি। “এখন দরকার শুধু সমন্বিত উদ্যোগ ও পর্যাপ্ত অর্থায়ন, যাতে এসব সমাধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

Link copied!